পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুল ribs ইতিকথা 8やか"l সাধারণ ক্ষতকেই পরান অতখানি বাড়াইয়া ফেলিয়াছে। পরান আসে না, নিজে গিয়া তাকে যে শশী জিজ্ঞাসা করিবে বাজিতপুরের সরকারি ডাক্তার কী বলিল, তাও শশীর অভিমানে বাধে। কুসুমও যদি একদিন কোনো ছলে আচমকা আসিয়া হাজির হইত! কেন সে আসে না ? সে যায় না বলিয়া যাওয়া আসায় সপ্তাহ মাসের ফঁােক তো এমন সে কত ফেলিয়াছে, তবু প্রায়ই কুসুমের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হইবার বাধা তো হয় নাই কখনও! একদিন খুব ভোরে বাড়ির সামনে রাস্তায় নামিযা দাঁড়াইতেই শশীর চােখে পড়িল কুসুমও নিজের বাড়ির সামনে পথে র্দাঁড়াইয়া আছে। কুসুমও যে শশীকে দেখিতে পাইয়াছে তা বোঝা গেল। কই, হাতছানি তো দিল না। কুসুম, আগাইয়া তো সে আসিল না ? শশী একটু দাঁড়াইয়া বহিল। খোলা মাঠে বিলীন কায়েতপাড়ার নির্জন রাস্তাটি আজও শশীর জীবনে রাজপথ হইয়া আছে, যে তাকে যতটুকু নাড়া দিয়াছে এইপথে তাদের সকলেবই পড়িয়াছে পদচিহ্ন। তাদের মধ্যে অবশিষ্ট আছে শুধু কুসুম, এ পথে আজ শুধু কুসুম হঁটে । আস্তে আস্তে শশী কুসুমের কাছে আগাইয়া গেল। তোমায় দেখে দাঁড়িয়েছিলাম বউ, ভাবছিলাম কাছে যাবে। আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন, আমি কাছে যাব ? তাতে কিছু দোষ আছে নাকি!!--শশী হাসিল, কই, কথা শুধোবার জন্যে তালবনে আর তো আমায় ডাকো না বউ ? কা। আর শুধোব? নতুন কিছু কী ঘটছে গাঁযে! ঘটছে। বইকী ! অত বড়ো হাসপাতাল হল, কেমন চলছে হাসপাতাল, রোগীপত্র কেমন হচ্ছে, এ সব তো শুধোতে পাব ? আমার সম্বন্ধে তোমার কৌতুহল যেন কমে যাচ্ছে বউ ; এবার কুসুম মিষ্টি করিয়া হাসিল, ওমা, তাই নাকি? তা হবে হয়তো! একটা কমে একটা বাডে এই তো নিয়াম জগতের । আকাশের মেঘ কমে নদীর জল বাড়ে,--নইলে কি জগৎ চলে ছোটো বাৰু ? বিবাদ হয় নাই, বিবাদ তাদের হইবার নয়, তবু কুসুমের সম্বন্ধে শশীর মনে ভয, ঢুকিয়াছিল৷ ” যে ব্যবহার যেন তাব কড়া হইয়া উঠিতেছে। তাতে ভয্যের কি আছে। শশী জানে না, শুধু কষ্ট হইয়াছিল। এখন খুশি হইয়া শশী বলিল, কৌতুহল কমে কি বাড়ল? কী জানি কী বাড়ল, একটা কিছু অবিশ্যি বেড়েছে। পরানের কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিয়া শশী এই সব কথা বলিল কুসুমের সঙে%। এই দরকারটাই তার যেন বেশি ছিল। তারপর, চলিয়া আসিবার আগে সে পর্যানের খবব জানিতে চাহিল। গলারঘা কমিয়াছে পরানোেব। কমিয়াছে ? ভালেই হইয়াছে। বাজিতপুরের ডাক্তারের ওষুধেই তবে গলার ঘা কমিলি পরানের ? শশীর ওষুধে বাড়িয়া গিয়াছিল। পরানের এত বড়ো অন্যায ব্যবহারের কথা শশী ভাবিতেও পারে না। বাড়াইবার সুযোগ দিয়া আর কমানোর সুযোগ দিল না, শশীব ওষুধে যে গলার ঘা তার বাড়িয়াছিল তাই হইয়া রহিল স্থায়ী সত্য! একদিনের জন্য ওষুধ লাগাইতে নাই বা আসিত পরান তার কাছে? গলার ঘা ভালো হইয়া গিয়াছে পরানের। শরীর সারে নাই। অত বড়ো কাঠামো বলিয়া আরও তাকে রোগা দেখায়। একটা টনিক খাইলে পারে। একটু স্ট্রিকনিন দিয়া শশী তাকে এমন টনিক তৈরি করিয়া দিতে পারে যে এক মাসে চেহারা ফিরিয়া যাইবে,-রোগা শরীরে অত খাটে, মাসকুলার ফেটিগে স্ট্রিাকনিন বড়ো উপকারী। বলিতে বাধে শশীর। কে জানে তার দেওয়া টনিক এক ডোজ খাইয়া শরীর আরও খারাপ হইয়াছে বলিয়া সে যদি আবার বাজিতপুরে সরকারি ডাক্তারের কাছে ছোটে !