পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8ぐ。 বাজিতপুরে কী কাজ ছিল শশীর কে জানে, গ্রামের অসংখ্য কাজ ফেলিয়া হঠাৎ সে বাজিতপুরে চলিয়া যায়। সিনিয়াব উকিল রামতারণের বাড়িতে একটা দিন চুপচাপ কাটাইয়া দেয়, তারপর যায় সরকারি ডাক্তারের বাড়ি। সরকারি ডাক্তারের সঙ্গে শশীর সম্প্রতি খুব ঘনিষ্ঠত হইয়াছিল, বাড়িতে অতিথি হওয়ায় এবার ভদ্রলোকের ক্ষীণাঙ্গী, এক স্বামী ও দুই ছেলের সংসার লইয়া বিশেষরূপে বিব্রতা স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ পরিচয় হইল। মানসিক বিপর্যয়ের সময় সংসারের এক একটি তুচ্ছ মানুষের কাছে আশ্চর্য সাস্তুনা মেলে, কাজে অপটু, কথা বলিতে অপটু ভীরু ও নিরীহ এই মহিলাটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে শশীকে যেন কিনিয়া ফেলিল। চা দিতে চা উছলাইয়া পড়িতেছে, ছেলে ধরিতে হেঁচটও লাগিল । থাকিয়া থাকিয়া বলে, আর পারি না বাবা! সত্যই পাবে না। তবু জোড়াতালি দিয়া কোনোরকমে সবই সে করে। সে জন্য আড়ালও খোজে না, সব ত্রুটি-বিচূতি তার প্রকাশা। এক ঘণ্টার মধ্যে মানুষের কাছে নিজের স্বরূপ মেলিয়া ধরে বলিয়াই বোধ হয় তাকে তার স্বামীরও ভালো লাগে, শশীরও লাগিল। গা থেকে ছমাইল,--মামাকে চেনেন? হরিশ্চন্দ্র নিয়োগী। আমি মামাবাড়ি গেছি সেই কোন ছেলেবেলায় --আর এই এবার এখানে এসে একবাব। আমার বাবা মুনসেফ ছিলেন। কিনা, তীর সঙ্গে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতাম । এখন কর্তার সঙ্গে বেড়ান। তা নযা ? এই তো ছমাস হল এসেছি। এখানে, এর মধ্যে বলে কিনা বদলি হ’ব! পাবদিন সকালে গ্রামে ফিরিবার জন্য শশী নদীর ঘাটে আসিয়া দাঁড়াইল। একটা নীেকা ভাড়া কবিতে হইবে। ঘাটে কুসুমের বাবা অনন্তের সঙেগ শশীর দেখা হইয়া গেল। অনন্ত বলিল, ডাক্তারবাবু এখানে ? শশী বলিল, একটু কাজে এসেছিলাম। একটা নীেকো নিয়ে গায়ে ফিরব। অনন্ত বলিল, নিজের নীেকো আনেননি? আমিও গাওদিয়া যাচ্ছি ডাক্তারবাবু, আমার নীেকোতেই চলুন না? একটু তবে বসুন নৌকোয় উঠে, বাজার থেকে একজোড়া শাড়ি কিনে আনি বঁা কবে মেয়েটার জন্যে।--আর হেই হানিফ, আন বাবা এদিকে সরিয়ে আন নীেকো, ডাক্তারবাবু। উঠবেন। অল্পক্ষণের মধ্যে কুসুমের জন্য একজোড়া শাড়ি কিনিয়া অনন্ত ফিরিয়া আসিল। নীেকায় উঠিযা শশীর একটু তফাতে হাত পা মেলিয়া বসিয়া বলিল, মেয়ে যেতে লিখেছে। ডাক্তাববাবু। লিখেছে, একেবারে বড়ো নীেকো নিয়ে এসে দুদিন এখানে থেকে সবাইকে নিযে ফিরে যাব। আপনি আমার যা উপকার করলেন ডাক্তারবাবু, কী আর বলব। শশী অবাক হইয়া বলিল, আমি আবার কি উপকার করলাম। আপনার ? অনন্ত বলিল, মেয়ে কি আমায় লেখেনি ডাক্তারবাবু, আপনার পরামর্শে আমার কাছে গিয়ে থাকা ঠিক করেছে? যা মাথা পাগলা মেয়ে আমার, আপনার পরামর্শ যে শুনল তাই আশ্চর্য। বলছি কি আজ থেকে! সেই যে বার বেয়াই অপঘাতে মরল তখন থেকে মেয়ে জামাইকে তোষামোদ করছি, কাজ কি বাবু তোদের এত কষ্ট করে এখানে থাকার, আমার কাছে এসে থাক। জামাইয়ের মতামতের জন্যে ভাবিনি ডাক্তারবাবু, সে জলের মানুষ, মেয়ে রাজি হলে সেও রাজি হত। মেয়েই ছিল বেঁকে। বলত, শাশুড়ি আছে ননদ আছে, ওরা আমার বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে চাইবে কেন? বেশ ভালো কথা, ননদের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রইলাম। তখন রইল শুধু এক শাশুড়ি, সেও