পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8Գ Օ মানিক রচনাসমগ্ৰ অরাজি নয়——এবার তবে আয় ? তাও না, দশটা ওজর দিয়ে মেয়ে আমার এখানকার মাটি কামড়ে রইল। নিতি। অভাব, কী সুখে যে ছিল কে জানে। তা ঠিক, কী সুখে কুসুম গাওদিয়ায় ছিল এতকাল ? অনন্ত সম্পন্ন গৃহস্থ, তার গায়ের সাটিনের কোটি আর কোমরে বাঁধা উড়নিই তা ঘোষণা করে। বাপের কাছে কুসুম পরম সুখে থাকিতে পারিত। এতদিনে কুসুমের তবে সুমতি হইয়াছে? শশীকে জানাইয়া সুমতিটা হইলে খুব বেশি ক্ষতি হইত না। তার পরামর্শে মতিগতি ফিরিযাছে বাপকে এ কথা লিখিবার কী উদ্দেশ্য ছিল কুসুমের ? কোমরে বাঁধা উড়ানি ও কোটটা খুলিয়া রাখিয়া আরাম করিয়া বসিয়া অনন্ত বলিল, শ্রাবণ মাসে আগের বার যখন নিতে আসি, আপনার সঙ্গেই যোবার এলাম বাজিতপুর পর্যন্ত,-সেবার রাজি হয়েছিল। যেতে যেতে আবার মত পালটাল। বড়ো ছেলেমানুষ পর্যানের বউ।—শশী বলিল। অনন্ত বলিল, ছোটাে মেয়ে, বড়ো দু বোনের বিয়ের পর ওই ছিল কাছে, বডড আদরে মানুষ হয়েছিল—একটু তাই খেয়ালি হয়েছে প্রকৃতি। সবচেয়ে ভালো ঘর বর দেখে ওর বিয়ে দিলাম, ওর আদেষ্টেই হল কষ্ট। সংসারে মানুষ চায় এক হয়। আর, চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তারবাবু। পুতুল বই তো নাই আমরা, একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন। শশী একটু হাসিয়া বলিল, তাকে একবার হাতে পেলে দেখে নিতাম। নদী ছাড়িয়া নীেকা খালে ঢোকে, অনন্তের সঙ্গে এ-কথা ও-কথা বলিতে বলিতে খাপছাড়া ভাবে জিজ্ঞাসা করিল, পরান বুঝি সব বেচে দেবো? বাড়িঘর জমি-জায়গা ? অনন্ত বলিল, আমার কাছে গিয়ে থাকলে এখানে বাড়ি-ঘর রেখে কী করবে? তাড়াহুড়ো কিছু নেই, আস্তে আস্তে সব বেচব। কেউ কিনবে যদি আপনার জানা থাকে— বলব, জানা থাকলে আপনাকে বলব। কুসুম তবে সত্যই যাইবে চিরদিনের জন্য গাওদিয়া ছাড়িয়া? এত তাড়াতাডি করিবার কী দরকাল ছিল! শশীও তো যাইবে, কুসুমের চেয়েও অনেক দূরদেশে, অনাত্মীয় মানুষেব মধ্যে। শশীর বিদায় নেওয়া পর্যন্ত কুসুম কি গ্রামে থাকিতে পারিত না ? হয়তো পরানের শরীব ভাঙিয়া গিয়াছে বলিয়া কুসুম তাড়াতাড়ি সরিয়া যাইতে চায়, যেখানে বিশ্রাম জুটিবে পরানের, অন্নচিন্তায় সে ব্যাকুল হইবে না, ভোর পাঁচটায় ভাঙা শরীর লইয়া ছুটিতে হইবে না মাঠে। কাজটা খুব বুদ্ধিমতীর মতোই করিতেছে কুসুম। তবু, শশীকে একবার কি সে বলিতে পারিত না ? মতি ও কুমুদের ব্যাপারটা শুনিবার জন্য একদিন কত ভোরে কুসুম তাকে তালবনে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল, এত বড়ো একটা উপলক্ষ পাইয়াও কুসুম কি তার পুনরাভিনয় করিতে পারিত না ? কথাটা বলিবার ছুতায় অসময়ে একবার কি সে আসিতে পারিত না। শশীর ঘরে,-গোপাল উঠিয়া দাওয়ায় বসিয়া থাকিবে। আর দরজা বন্ধ করিয়া অনেকক্ষণ শশীর কাছে তাহাকে বসিয়া থাকিতে হইবে, এ রকম একটা প্ৰত্যাশা করিয়া ? কুসুম রাগ করিয়াছে নাকি! বাড়িতে পা দেওয়ামাত্র গোপাল বলিল, কোথায় গিয়েছিলি শশী? ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পরশু থেকে র্তাবু গেড়ে বসে আছেন গাঁয়ে, দশবার তীর চাপরাশি তোকে ডাকতে এল, শীতলবাবু দুবেলা লোক পাঠাচ্ছেন। কোথায় গেলি, কবে ফিরবি তাও কিছু বলে গেলি না। যা যা ছুটে যা, দেখা করে আয় গে। সায়েবের সঙ্গে। ভালো পোশাক পরে যা।