পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8Գ V2 মানিক রচনাসমগ্র তার সে উন্মাদ ভালোবাসা নিজীবী হইয়া আসিয়াছে। হয়তো মরিয়াই গিয়াছে! কে বলিতে পারে ? আজ এ ঘটনা শশীর কাছে যত ভয়ানক মনে হােক এই পরিণতিই তো স্বাভাবিক। গায়ের মেয়ে ঘরের বউ কুসুম, মনোবাসনা কতদূর অদম্য হইয়া ওঠায় দিনের পর দিন নৈবেদের মতো নিজেকে শশীর কাছে সে নিবেদন করিয়া চলিয়াছিল এখন শশী তা বুঝিতে পারে, কুসুমের অমন ভয়ানক উপবাসী ভালোবাসা যে এতকাল সতেজে বাঁচিয়া ছিল তাই তো কল্পনাতীতরূপে বিস্ময়কর। আপনা হইতে যে প্ৰেম জাগিয়াছিল। আপনা হইতে স্বাভাবিক নিয়মে আবার তা লয় পাইয়াছে। শশীকে না। দেখিয়া এখন কুসমেব দিন কাটিবে, শশীকে বাদ দিয়া কাটিবে জীবন। কুসুমের পরিবর্তনে আশ্চর্য শশী তাই হয় না। ঘরে আগুন লাগিলে আগুন নেভে— বাহিরেরও, মনেরও। কুসুমের মনের আগুন কেন চিরদিন জ্বলিবে? নিজের ব্যাকুলত শশীকে অবাক করিয়া রাখে। যখনই মনে হয় তার আর কিছুই করিবার নাই, জীবনে যত বড়ো অসম্ভবকে সম্ভব করিতে পারুক কুসুমকে আর কোনোদিন সে ভালোবাসাইতে পাবিবে না, কষ্টে শশী ছটফট করে। ফুটিয়া ঝরিয়া গিয়াছে, কুসুম মরিয়া গিয়াছে—তারই চোখের সামনে, তারই অন্যমনস্ক মনের প্রান্তে। কী ছেলেখেলায় সে মাতিয়া ছিল যে এমন ব্যাপার ঘটিতে দিল ? ছেলেখেলাগুলি সবই বর্তমান আছে। হাসপাতালে গেল শশী, নাড়ি টিপিয়া হৃৎস্পন্দন শুনিয়া ওষুধ লিখিয়া দিল,--ফেঁাড়াও কাটিল একটা। সাতগায় রোগীও দেখিতে যাইতে হইল। কতকাল এ সব কর্তব্য শশী করিতেছে একদিন কি কলের মতো কাজগুলি করা যায় না? অন্যমনে কুসুমের কথা ভাবিতে ভাবিতে নাড়ি টিপিতে কেহ তো তাহাকে বারণ কবে নাই, এত রাগ কেন শশীর, মরণাপন্ন রোগীকে এমন ধমক দেওয়া কেন ? কী আপশোশ আজ শশীর মনে, কী আত্মধিক্কার। কারও তা বুঝিবার নয়। ধরিতে গেলে একদিক দিয়া এ তো ভালোই হইয়াছে শশী? ঘরেব বউ শুদ্ধ ও পবিত্রভাবে ঘরেই রহিয়া গিয়াছে, রক্ষা পাইয়াছে নীতি ও ধর্ম। সতাই এদিক দিয়া শশীর একটু ভালো লাগা উচিত ছিল। ভালোেমন্দের অনেকদিনের পুরানো এ সব সংস্কাবস্তাব আছে বইকী, তবু, একবারও শশীর মনে হইল না একদিন অনেক ভণিতা করিয়া কুসুমকে যে কথাগুলি বুঝাইয়া বলিতে গিয়াছিল আজ প্রকারান্তবে তাই ঘটিয়াছে—শান্ত মনে বুঝিয়া শুনিয়া চারিদিক বিবেচনা করিয়া কুসুমকে সে যে আত্মসংযম অভ্যাস করিতে বলিয়াছিল, কিছু না বুঝিয়া শুনিযাই কুসুম এখন অনায়াসে তা পালন করিতে পারিাবে। পরদিন সকালে কুসুমকে এ বাড়িতে দেখা গেল। মেয়েদের কাছে বিদায লইতে আসিয়াছে আর কেহ হইলে হয়তো ভাবিয়া বসিত এ তার শশীকে দেখিতে আসার ছল, শশী তা ভাবিল না। নিজের পক্ষে সুবিধাজনক ভাবনাগুলিকে শশী চিরকাল ভয়ানক সন্দেহেব সঙ্গে বিচার করে। তবু সে করিল। কী, বাহিরে দাঁড়াইয়া পাকার বদলে নিজের ঘরে গিয়া সকলে কী ভাবিবে না ভাবিবে একেবারে অগ্রাহ্য কবিয়া ডাকিল, পরানের বউ, একবার শোনো। কুসুম ঘরে আসিয়া বলিল, বিদায় নিতে এলাম ছোটােবাবু। দোষটােয্য যা করেছি। মনে রাখবেন নাকি ? শশী বলিল, বাখব না? দোষগুণ, ভালোমন্দ, তোমার সম্বন্ধে খুঁটিনাটি তুচ্ছ কথাটি পর্যন্ত কোনোদিন ভুলতে পারব না বউ। কালকের চেয়ে শশীর আজকের প্ৰেম-নিবেদন ঢের স্পষ্ট। যেমন বলিল তেমনভাবে শশী যদি কুসুমকে মনে রাখে। তবে সত্যসত্যই কী গভীরভাবে কুসুমকে সে ভালোবাসে? কুসুম তাই কঁদো কঁদো হইয়া বলিল, এমন করে বললে আমার যে পায়াভারি হয়ে যায় ছোটােবাবু? শশী বলিল, সত্যি কথা আমি সোজা ভাষাতেই বলি। বউ-স্পষ্ট করে। ইশারা ফিশারায় বলা अभिी शाम कीं।