পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8br> তাই সে করিয়াছে, তার বেশি আর সে কী করিতে পারে? ‘আজ পর্যন্ত সে যে অনেকগুলি প্ৰাণ বক্ষণ করিয়াছে সেটাও তো ধরিতে হইবে ? গোপাল একেবারে মুহ্যমান হইয়া গেল। এমন পবিবর্তন আসিল গোপালেব যে সকলের সেটা নজরে পড়িতেছে বুঝিয়া শশীীর লজ্জা করিতে লাগিল। গোপাল চিবকাল ভোজন-বিলাসী এখন তার আহারে রুচি নাই, আমন চড়া মেজাজ। কিন্তু মুখ দিয়া আর কড়া কথা বাহির হয় না। গম্ভীর বিষন্ন মুখে বাহিরের ঘরে ফরাশে বসিয়া তামাক টানে আর আবশ্যক অনাবশ্যক নথিপত্র ঘাটে, যেগুলি গোপালের কাছে এতকাল নাটক নভেলের মতো প্রিয় ছিল। মন হয়তো বসে না গোপালের, তবু এই অভ্যস্ত কাজের মধ্যে ডুবিয়া থাকিয়া সে সময় কাটানোব চেষ্টা করে। শশী আশ্চর্য হইয়া যায়। এ সব তার কাছে একান্ত খাপছাড়া লাগে। অপ্রত্যাশিত যত কিছু ঘটিয়াছে শশীর জীবনে তার মধ্যে গোপালের চরিত্রেব এই বেমানান দিকটা সবচেয়ে বিস্ময়কর মনে হয়। শশীর সঙ্গে কথাবার্তা গোপালের খুব কমই হয়। দুজনের দুটি জগৎ যেন এতদিনে একেবারে পুথক হইয়া গিয়াছে। একদিন আচমকা গোপাল জিজ্ঞাসা করিল, তোমার সেনদিদি কীসে মরাল ရာအိ† ၇ হার্ট খাবাপ ছিল। গোড়ায বুঝি পরতে পারনি ? গোডাত দুই পরেছিলাম। তবে মরাল ফে] ? এ প্রশ্নে শশী হঠাৎ রাগিয়া গেল। বলিল, গোড়ায় রোগ ধরতে পারলেও মানুষ মরে। গোপাল বলিল, ইনজেকশন দুটাে আগে দাওনি বলে হয়তো--- এটুকু বলিয়া উৎসুকভাবে গোপাল খানিকক্ষণ শশীর মন্তব্যের প্রতীক্ষা কবিয়া রহিল। কী সত। সে নির্ণয় করিতে চায় কে জানে! শশী একেবারে স্তম্ভিত হইয়া যায। খুটিয়া খুটিয়া তার চিকিৎসার আগাগোড়াই হয়তো গোপাল জানিয়া লইয়াছে। কী ভাবিয়াছে গোপাল? চিকিৎসক পুত্রের সম্বন্ধে কী অকথা ভাবনা তার মনে আসিয়াছে পাঁ মুখখানা লাল হইযা যায শশীর। কিছু বলিতে ভরসা পায়ু না। কৃপানাথ বলছিল সময়মতো দু-একদানা মৃগনাভি দিলে--- শশী এবার নীরবে উঠিয়া চলিয়া গেল। বাগও হয, মমতাও বোধ করে শশী । বিষয়ী, সংসারী, প্রৌঢ়বযসি মানুষ, তার এ কী ছেলেমানুষি। কুন্দ জিজ্ঞাসা করে, মামার কী হয়েছে। শশীদাদা? একটু মেহব্যাকুল সুরেই জিজ্ঞাসা করে। কুন্দর ছেলেটির বডো কঠিন অসুখ হইয়াছিল, অনেক চেষ্টায় শশী তাকে ভালো করিয়া তুলিয়াছে। পাকা দালানে একখানা ঘরও দেওয়া হইয়াছে কুন্দকে, আর দেওয়া হইয়াছে সংসার পরিচালনার কিছু কিছু দায়িত্ব। মুখবা কুন্দ একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে। কত সামান্য কামনা থাকে এক একটি স্ত্রীলোকের, যার অভাবে স্বভাবটি হইয়া ওঠে হিংস্র, খিটখিটে! শশীরও আজকাল মনে হয়, না, কুন্দর প্রকৃতি তেমন মন্দ নয, মোটামুটি ভালোই মেয়েটা। নিজের কাজের চাপে আজকাল আর বেশি নজর দিবার সময় পায় না, কুন্দ যে সিন্ধুকে বেশ যত্নটতু করে তাতে শশী আরও খুশি হয়। কুন্দব প্রশ্নের জবাবে সে বলে, আমি জানি না। কুন্দ। কুন্দ বলে, আপনি বিয়ে-টিয়ে করলেন না, কাল আমার কাছে বড়ো দুঃখ করছিলেন। শশী বলে, বাবা দুঃখ করছিলেন না তুই বাবার কাছে দুঃখ করছিলি ? কুন্দ একটু হাসিয়া বলে, আমরা দুজনেই করছিলাম। শশী অবাক হইয়া তাকায় কুন্দর দিকে। এমন খাপসই আলাপ কুন্দ শিখিল কোথায় ? হঠাৎ শশীর মনে হয় কুন্দ যেন বড়ো সুখী, ওর জীবনটা যেন আনন্দে পরিপূর্ণ। একটু ভাবপ্রবণ কুন্দ, মানিক ১ম-৩১