পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8try মানিক রচনাসমগ্ৰ গোপাল বাকুলভাবে বলিল, তাতে তো অনেক দিন লাগবে শশী-দু-তিন বছরের কম নয়! এতকাল আমি এক পড়ে থাকিব গায়ে ? শশী আশ্চর্য হইয়া বলিল, একা পড়ে থাকবেন ? না, একা নয়, ঘবভরা আত্মীয়-পরিজন থাকিবে গোপালের, গ্রামভরা থাকিবে শত্ৰু-মিত্র। তবু শশী না থাকিলে কী একাই যে সে হইয়া যাইবে এত বড়ো ছেলেকে কেমন করিয গোপাল আজ তা বোঝায়! এ জগতে আর কে আছে একা গোপালেব অন্তর জুড়িয়া ? হৃদয় তাহার কী রীতি পালন করিয়াছে গোপাল তা জানে না, এ জগতে একটা মানুষকে সে স্নেহ করিতে পারে নাই, নিজেব মেয়ে কটাকে পর্যন্ত নয়, শুধু শশীর জন্য এক শশীর জন্য, উন্মাদ বাৎসল্য আজও বুক জুড়িয়া আছে। গাম্ভীৰ্য, ধীরতা সব খসিযা যায় গোপালের, জড়ানো ভারী গলায় সে বলে, কোন যাবি বাবা ? আমাব ওপর রাগ করে ? তোৰ তো আমি কিছুই করিনি! শশী মৃদুস্বাবে বলিল, জীবনের উন্নতি করতে যাব, এতে রাগের কী আছে? একটু ভাবিয়া গোপাল বলিল, তিন-চার বছর পরে ফিবে এসে হযতো আমায় আর দেখতেই @ifချိ ၊ အမေရ၏} | তিন-চার বছর পরেও সে যে ফিরিয়া আসিবে না সে বিষয়ে শশী কিছু বলিল না। নীরবে ভাত মাখিতে লাগিল । গোপাল আবােব বলিল, বুড়ো হলাম, হঠাৎ একদিন যদি মরে যাই, তুইও কাছে না থাকিস, কে এ সব দেখবে শশী ? সারাজীবন খেটে খুটে যা কিছু করেছি। সব যে ছাবেখাবে যাবে। শশী বলিল, আপনার যাকে খুশি সব দিয়ে দেবেন। এ তো ছেলেমানুযি কথা হল শশী, রাগের কথা হল! বলিযা গোপাল উৎসুক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। মিথ্যা আশা। প্রতিবাদ করিয়া কিছুই তো শশী বলিল না। ভিতরে ভিতরে একটা জ্বালা বোধ করিতেছিল গোপাল, কী অদ্ভুত বিকারগ্রস্ত সে সন্তান যার মনের নাগাল মেলে না? কী হইয়াছে বলুক। না। শশী, জানাক না ঠিক কী সে চায়। অনেক অধিকার ত্যাগ করিয়া ছেলেব ইচ্ছায় গোপাল আজি সায় দিবে। নিজেব অনিচ্ছার দিকে একেবাবেই তাকাইবে না। উপযুক্ত হইয়া অবাধ্য হইয়াছে ছেলে, কী আর করিবে গোপাল, নীরবে সবই তাহাকে সহিতে হইবে। এই ধরনের কথা কিছু শশীকে সে বলে। তার কথায় এক প্রকার অদ্ভুত মিনতি ধ্বনিত হইতে থাকে। কী উগ্ৰ ক্ৰোধ আর নিদারুণ ভয আর গভীর দুঃখ মনের মধ্যে চাপিয়া রাখিয়া গোপাল কথা বলিতেছে বুঝিতে পারিয়া নিজেকে বড়ো বিপন্ন বোধ কবে শশী, তবু ধরা-ছোয়া সে দেয় না। পিতাপুত্রে কী আলোচনা আজ শুবু হইয়াছে বুঝিতে কাহারও বাকি থাকে নাই, ঘরে ঘরে দরজার জানালার আড়ালে জড়ো হইয়া সকলে ওৎ পাতিয়া আছে, চড়া গলায় এদের কথা শুরু হইলে প্ৰাণ ভরিয়া শুনিবে। বাড়ির একটা অস্বাভাবিক স্তব্ধ আবহাওয়া স্পষ্ট অনুভব করা যায়। কখন ঝড উঠিবে ঠিক নাই। ঝড় উঠিল সম্পূর্ণ অন্যদিক দিয়া। হঠাৎ সেনদিদির ছেলেকে কোলে করিয়া কোথা হইতে কুন্দ আসিয়া দাঁড়াইল। বলিল, খেয়ে উঠে একে একবার দেখবেন তো শশীদাদা, গাটা বড়ো গরম বোধ ठू49छ । A. শশী মুখ তুলিল না, কথা বলিল না। গোপাল বঁ হাত বাড়াইয়া উদবিগ্ন কণ্ঠে বলিল, জ্বর হয়েছে নাকি? দেখি।--দাখ তো শশী একবার গায়ে হাত দিয়ে ? জ্বরই মনে হচ্ছে যেন। শশী নিঃশব্দে ভাত ফেলিয়া চলিয়া গেল। জ্বর হইয়াছে কি না দেখিবার জন্য অতটুকু শিশুর গায়ে একবার হাত দিবার অনুরোধ। তার জবাবে আমন করিয়া উঠিয়া গেলে সে কাজের মানে গোপালের মাথাতেও ঢোকে বইকী। কুন্দর বিস্মিত দৃষ্টিপাতে লজ্জায় গোপালের গায়ে আজ কঁটা দিয়া ওঠে। জীবনে বােধ হয় এই প্রথম।