পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8br> তারপর ভয়ানক ভাবে সে আত্মসংবরণ করে। অভ্যস্ত গলায় হুংকার দিয়া কুন্দকে বলে, দূর হ, সামনে থেকে দূর হ হারামজাদি। বিনা দোষে এমন গর্জন কুন্দ সহিতে পারে না, প্রথমে সে বিহ্বল হইয়া গেল, তারপর কঁদিতে কঁদিতে চলিযা গেল নিজের ঘরে। দেখিতে দেখিতে বাড়ির কৌতুহলী মেয়েবা সেখানে গিয়া হাজির। কিছুদিন হইতে এ বাড়িব কাণ্ডকারখানায় সকলে ভ্যাবাচ্যােকা খাইয়া যাইতেছে। সাহসী কুন্দই সম্প্রতি কর্তাদের একটু নেকনজরে পড়িয়াছিল, আজ তার দুর্দশায় সকলে অল্প-বিস্তর খুশি ও আশ্চর্য হইয়া গোল । কেন রে কুন্দ, বকিলো কেন রে তোকে ? কুন্দ কি সহজে সে কথা ফাস করে? ফোস ফোস করিয়া সকলকে সে চলিয়া যাইতে বলে, কেন বিরক্ত কবছ আমায় ? অনেক তোষামোদে একটু ঠান্ডা হয় কুন্দ, তারপর গোপালের রাগের কারণটা ব্যক্তি করে। বলে, আমার যেমন পোড়া কপাল! সেনদিদির ছেলেটাকে শশীদাদার সামনে নিয়ে যেতে কতবার মামা বারণ করেছে, তা কথাটা একদম ভুলেই গেলাম। সাদাসিধে মানুষ বাবু আমি, ও সব ঘোর-প্যাচের কথা কী ছাই আমার মনে থাকে! সকলে বলে, হ্যালো কুন্দ, ও ছেলেকে আনার পর থেকে তাই বুঝি শশী এমন রেগে আছে, বাপের সঙ্গে কথা কয় না, বিবাগি হয়ে বেরিয়ে যাবে বলে? • ক্ষী তো কী? কুন্দ বলে। একটু হাসে কুন্দ। কে জানিত তলে তলে এমন বঁাকা মন আমাদের ঠোঁট কাটা কুন্দব । বলে, এই ছেলেটাকে নিয়ে বাপ-ব্যাটার কত কী চলেছে তোমরা কি জানবো! টের পাই আমি। কী হয়। দেখবার জনোই তো দুজনে একত্তর খেতে বসেছে দেখে ছেলেটাকে নিয়ে গেলাম। অমন গাল খাব তা ভাবিনি ছোটোেমামি। আর এখনই হযেছে কী, একে নিয়ে কী ভীষণ কাণ্ড হয় দেখো, যেমন তেমন মাযেব ছেলে তো নয়। এ { তার ওপরে মাই খাচ্ছে তোর, না রে কুন্দ ? ও ছেলে দেবেই তো ঘরে আগুন! জুব বোধ হয় একটু হইয়াছিল ছেলেটার, গোলাপি বর্ণ তাহার আরও লালিম হইয়া উঠিয়াছে, তাকাইলে চোখ ফেরানো যায না এমন আশ্চর্য সুন্দর শিশু, তাকে কেন্দ্ৰ করিয়া এ বাড়িতে এত বড়ো একটা ঝড় উঠিবাব উপকম হইয়াছে। এ যেন বিশ্বাস করা যায় না। কুন্দর চারিদিকে সমবেত মায়েরা দুৰ্ভাগা ছেলেটাকে ঈর্ষা করে, বাৎসলো ব্যাকুলও হয়। এর সঙ্গে এক বাড়িতে বাস কবিতে চাহে না, কী কঠোর মনটা শশীর, স্নেহলেশশূন্য অন্তঃকরণ! সেদিন বাত্রে বিনিদ্র গোপাল কী সব ভাবিল সেই জানে, পরদিন সকালে কুন্দকে সে চালান করিয়া দিলে তার খুডশ্বশুরের বাড়ি রাজাতলায়, সঙ্গে গেল তার স্বামীপুত্র এবং সেনদিদির ছেলে । কাজটা করিয়া গোপাল যেন অনেকটা নিশ্চিন্ত হইল। রাগের কারণ দূর হইল, আর তো শশীব রাগ থাকিবে না? সেনদিদির ছেলে পৃথিবীতে আসিয়াছে বলিয়া শশী রাগ করে নাই, তাকে বাড়িতে আনা হইয়াছে বলিয়া সে গৃহত্যাগ করিয়া যাইতেছে। এ অন্যায় আবদার শশীর, অসংগত ব্যবহার, তবু মাথা নিচু করিয়া গোপাল যখন তাহার অভিযোগের প্রতিকার করিল, বাড়ি ছাড়িয়া যাইতে কি আর শশী পরিবে! পরের মুখে খবরটা ঠিকমতো শশীর কানে পৌছিবে না আশঙ্কা করিয়া চোখ কান বুজিয়া নিজেই গোপাল তাহাকে শোনাইয়া দিল। বলিল, কুন্দকে আজ শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিলাম শশী। শশী বলিল, রাজাতলায় ? গোপাল বলিল, হ্যা। যামিনীর ছেলেটাকেও ওর সঙ্গে দিয়ে দিলাম। যামিনীর ছেলের প্রসঙ্গ উঠিলে শশী মুখ খোলে না। গোপাল আবার বলিল, কুন্দ এখন ওখানেই থাকবে। বলে দিয়েছি। এখানে আসবার ওদের কোনো দরকার নেই।