পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8SS গোপাল ক্ষুন্ন হইয়া বলিল, আজ বান্নার একটু আয়োজন করতে বলেছিলাম। বাবা, ভাবলাম পরের ছেলে একটি বাড়িতে এসে আছে, আজ বাদে কাল চলে যাবে, একদিন একটু আয়োজনপত্র করি খাওয়াব। তুমি খেয়ে আসবে বাইরে থেকে, তা তো জানতাম না। শশী জিজ্ঞাসা করিল, পরের ছেলে কে ? গোপাল বলিল, অমূল্যবাবুর কথা বলছি। আহা, ডেকেড়কে এনে চলে যেতে বললে বড়ো লাগবে বেচারির মনে । শশী বলিল, অমূল্য চলে যাবে কেন ? ওকেই তো হাসপাতালের কাজ দেওয়া হয়েছে? গোপাল সািভয়ে বলিল, তুই থাকলে ও আবার কী করতে থাকবে শশী, আঁ্যা ? আমি পবশু রওনা হব ভাবছি। —শশী বলিল। পবশ্ব ? গোপালের মুখে আর কথা ফুটিল না। শশী ঘরে চলিয়া গেলে সে একেবারে বাহিরের দাওয়ায গিয়া অন্ধকারে কাঠের বেঞ্চিটাতে বসিয়া রহিল। একজন মুনিষ দাওয়ায় শয়নের আয়োজন করিতেছিল, সে এক ছিলিম তামাক সাজিয়া দিল গোপালকে, তাবপর মনিবেবী সামনে শুইয়া পড়িতে না পাবিয়া বিছানো চাটাইটির উপরে উবু হইযা বসিয়া শ্রান্তিবশত জোবে একটা নিশ্বাস ফেলিল । আজ আবার ব্রহ্মচারীকে মনে পড়িতেছে গোপালের, সেনদিদির মৃত্যুর পর মনে যে গভীর বিষাদ ও বৈবােগ্য আসিয়াছিল, ব্ৰহ্মচারীর মুখে নীবাস আধ্যাত্মিক কাহিনি শুনিতে শুনিতে এক আশ্চর্য উপায্যে তােৱ .. '.jটা কাটিয়া গিয়াছিল। আজ বড়ো অবসন্ন মনে হইতেছে নিজেকে। বিচিত্ৰ কাণ্ডকাবখানা ভবা দীর্ঘ জীবনটা আজ অকারণ, অর্থহীন মনে হইতেছে-কোনো কাজেই লাগিল না। শশীব জন্মের দিনটি হইতে তারািঠ পানে চোখ বাখিয়া কত কল্পনাই গোপাল করিয়াছে — যার ডগাটি আকাশে ঠেকিযা প্রায় হইয়াছে আকাশ-কুসুম! লেখাপড়া শিখিয়া এ কী রীতিনীতি শিখিয়াছে শশী ? বাগান বাড়ি জমিজমা ধনসম্পদ আত্মীয়-পরিজন এ৩ সব যে গোপাল একত্ৰ করিয়াছে, এ কি তার নিজের জন্য প। তার আব্ব কতদিন বাকি। এ সব তুচ্ছ করিয়া শশী যদি চলিয়া যায়, সমস্ত জীবনটাই গোপালের ব্যৰ্থ হইয়া যাইবে না ? এত রাত্রে সে একবাব অমূল্যের ঘরে যায়। অমূল্যাকে জাগাইয়া বলে, একটা কথা শুধেই বাবু তোমাকে। শশী পরশু চলে যাবে আমায় যে বলনি? বাতদুপুরে ঘুমন্ত মানুষকে তুলিয়া গোপালের এই কৈফিয়ত দাবি করা অমূল্যকে ভড়কাইয়া দেয়। সে বলে, আমি জানতাম না, কবে যাবে শশী আমায় কিছু বলেনি। গোপাল অসন্তোষের সুরে বলে, আর সব বললে, এ কথাটা বললে না? কী যেন মতলব ছিল বাবু তোমার তাই গোপন করেছিলে। অমূল্য জিভ কাটিয়া বলে, আজ্ঞে না, সে কী কথা ? গোপাল বলিল, সে কী কথা! আমার ছেলে দেশছাড়া হবে চিরকালের জন্যে আর তুমি তার জায়গায় জেকে বসবে, বড়ো ভালো মতলব তোমার! ওঠে। দিকি বাবু সুখশয্যা ছেড়ে, জিনিসপত্র চুপিচুপি গুছিয়ে নাও! তারপব চলে আমরা বিদেয় হই! ডাকাতের মতো দেখায় গোপালকে, খুনে দাঙ্গাবাজের মতো শোনায় তার কথাবার্তা। অমূল্যের ঘরে যে বিচিত্র, নাটকীয কথোপকথন চলে। কিছুই শ্ৰান্ত শশীব চেতনায় পৌঁছায় না, জীবন সম্বন্ধে যে আমন তীব্রভাবে সচেতন সে হইযা থাকে পুতুলের মতো চেতনাহীন। তাকেই বাৎসল্য করে বলিয়া মধ্যরাত্রে গোপাল আজ যে বিচিত্র দৃশ্যের অবতারণা করে, যে সব অদ্ভুত কথা বলে, তা দেখিলে ও শুনিলে একটা অভিজ্ঞতা জন্মিয়া যাইত শশীর। চাপা গলায় খানিকক্ষণ অমূল্যের প্রতি তর্জন গর্জন করিয়া গরম মাথাটা বোধ হয় একটু ঠান্ডা হয় গোপালের, সে ঘরে যায়। পরদিন খুব ভোরে শশীকে সে ডাকিয়া তুলিল। শশী উঠিয়া দেখিল মুনিয্যের মাথায় বাকসো বিছানা চাপাইয়া কোথায় যাইবার জন্য গোপাল প্ৰস্তুত হইয়া আছে।