পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in গ্রন্থপরিচয় ○ > (? এইরুপ উদাহরণের পরিমাণ নিতান্ত কম নয়। পুতুলনাচের ইতিকথা-র দ্বিতীয় অর্থাৎ ১৯৪৭-এ প্রকাশিত বুকম্যান সংস্করণে গ্রন্থপরিচিতি হিসেবে পশ্চাদপ্রচ্ছদে প্রকাশকের পক্ষ থেকে নিম্নরূপ বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল : পৃথিবীব এই বিরাট বঙ্গমঞ্চে মানুষ যেন শুধু পুতুল। কোন অদৃশ্য হাতেব সুতোর টানাপোড়েনে মানুষ নাচে। কঁাদে, কথা বলে। নদীব মতো নিজের খুশিতে গড়াপথে তার জীবনের স্রোত বয়ে চলে না, মানুষের হাতে কাটা খালে তুতাব গতি । যে সীমাহীন নীড়-প্রেমের স্বপ্ন দেখেছিল শশী, সে স্বপ্ন তার চুবমার হয়ে গেল কেন? তার প্রিয়জনেল পদচিহ্নলাঞ্ছিত কায়েত পাড়াব সেই নির্জন রাস্তা শশীর জীবনে শুধু রাজপথ হয়েই বইল, কিন্তু সে পথে প্রিয়জনের আনাগোনাব প্রয়োজন গেল ফুবিয়ে, তালবনেব। মাটির টিলাব ওপর দাঁড়িযে সূৰ্য্যাস্ত দেখবাব সখী শশীর জীবনে সত্যিই কি আবি আসবে না ? দীর্ঘ ন-বছব ধরে প্রতিটি মুহূর্ত যে দুৰ্জয় প্রেমের জন্য কুসুমেব দেহমান উদ্বেল হয়ে ছিল, সে মুহূর্ত যখন সত্যিই এল সেই চপল বহস্যময়ী কুসুম সেদিন আবিষ্কাব কবল সে আব বেঁচে নেই। অপরূপ সুন্দৰী সেনদিদি, গোপাল, নন্দলালের পাপ-জমা কবা দেহের অধিকারিণী বিন্দু, কুমুদ, মতি— এদেব বহস্যঘন জীবনেব অবগুণ্ঠন মোচন কববে কে? পুতুলনাচেব ইতিকথা এই বিপর্যস্ত জীবন্ত পুতুলদেব হাসিকায়াল মর্মান্তিক অভিনয় আৰ তাদেব প্রেরণাহীন যান্ত্রিক জীবনের বার্থতাব ইতিহাস । মানিক বন্দোপাধ্যান্য বিভিন্ন সমযে বিভিন্ন কাগজে নোটবইয়ে বিভিন্ন মন্তব্য, কোনো ভাবনা, লেখালে খসড়া ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। যুগান্তর চক্ৰবতীর সম্পাদনায় সেই অপ্রকাশিত লেখাগুলির কিছু অংশ, প্রাসঙ্গিক সূত্রনির্দেশসহ, নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত এক্ষণ পত্রিকা ১৩৮৪ বঙ্গাব্দ শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। লিখনগুলি বিচ্ছিন্ন কয়েকটি মন্তব্য, পারম্পর্যহীন, কলাঙ্কহীন, লেখক-স্বাক্ষরিত এবং শিরোনামযুক্ত। তারই একটিতে আছে পুতুলনাচের ইতিকথা সম্পর্কে ‘আত্মসমালোচনা’-শীর্ষক লেখকেব। নিজস্ব অভিপ্ৰায় ও বিষয়বস্তুর ভাষা · পুতুলনাচেব ইতিকথা সম্পর্কে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও মতপ্রকাশ ঘটেছে। নবতম সংস্কবণে বইটিব পিছনে বিজ্ঞাপনাত্মক প্রচাবমূলক কয়েক লাইন লেখাও দেওযা হয়েছে। আমি কখনো প্রতিবাদও কবিনি, প্রশ্নও করিনি। ঘবো যা সমালোচনা, বইয়ের পিছনে একজন কঁচা [বিজ্ঞাপন} বিশারদেব ধাপ্লাবাজি ছাপানো---এসব কন্ট্রোল কবীতে পারতাম। কিন্তু করিনি। কস্ট্রোল না কবে সাধাবণ পাঠক এইসব বিভ্রান্তিমূলক প্রচাব সত্ত্বেও বইটা কিভাবে নেয জানা দবকাব ছিল। আলোচনা, সমালোচনা, মতামত, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি এতকাল নীরবে অনুধাবন কবে এসে এবাব আমাৰ আত্মসমালোচনা প্রকাশ কবার তাগিদ ও প্রয়োজন উপলব্ধি কবেছি। বইটা নয়—বইযেব নামটা বিভ্রান্ত করে দিয়েছে সমালোচক থেকে বইটা যাতে বেশি বিকি হয়। সেই উদ্দেশ্যে বইয়েব পিছনেব বিজ্ঞাপনাটিব লেখককে পর্যন্ত। পুতুলনাচেব ইতিকথা ? তবে আব্ব কথা কি, মানিকবাবু মানুষকে পুতুল বানিযেছেন. ভাগ্যোল দাস বানিয়েছেন। এটা হল বিচাবিকদেব রায় । যারা বিচাবি কবে না, যারা আজ বিশ বহুব ধবে বইটাকে জীবন্ত বেখেছে, তাবা টের পায। এ বইখানা মানুষকে যারা পুতুলের মত নাচায় তাদেব বিরুদ্ধে দাবাদী প্রতিবাদ। প্রচণ্ড বিক্ষোভ নয়, স্থায়ী দরদী প্রতিবাদ । শিশু পুতুলের সঙ্গে খেলা করে। শাস্ত্র । স্না না জানলেও সে জানে কোনটা পুতুল কোনটা মানুষ। সামন্ততান্ত্রিক অবস্থায় হাবুডুবু খেতে খেতেও এতগুলি মানুষ চেষ্টা করছে সে অবস্থাকে অতিক্রম করতে-কুডি বছর আগের বাংলা দেশে যখন সামন্ততন্ত্র প্রধান সমস্যা বলেই গণ্য হত না, তখন মানুষের সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, কিছু মানুযের হাতে পুতুল হবাব বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ, স্লোগানের বদলে সাহিত্যসৃষ্টিব মাধ্যমে বুপ নিয়েছে। আমি ভাবছি, হায়! যদি বইটার একটা ভূমিকা দিয়ে লিখে দিতাম মানুষকে কিভাবে পুতুল কবা হয়েছে এটা তারই উপন্যাস-আমার বইখানাব। পিছনে হয়তো প্রচারক আমাকে ভাগ্যবাদী ঘোষণা করতেন না। কত বোকামিই করেছি।