পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in G8 মানিক রচনাসমগ্ৰ মামা বলিল, সে কী মা, কথা বলিসনে কী? শ্যামা বলিল, বলি, দরকার মতো বলি।--পিয়ত্ৰিশ বচ্ছর বয়স হল আজেবাজে কথা আর মুখে আসে না,-- দোষ বল দোষ, গুণ বল গুণ, যা পারিনে তা পারিই নে। ঘর তুলিবার হিড়িকে শ্যামা, আমাদের ছেলে-পগলা শ্যামা, ছেলেমেয়েদের যেন ভুলিয়া গিয়াছে। কত আর পারে মানুষ ? সংসারে উদয়াস্ত খাটিয়া আগেই তাহার অবসর থাকিত না, এখন মিস্ত্রির কাজ দেখিতে হয়, এটা-ওটা আনাইয়া দিতে হয়, ঘর তোলার হাঙগামা কি কম! শ্যামা পারেও বটে! একহাতে ছোটাে ছেলেটাকে বুকেবা কাছে ধরিয়া রাখে, সে বুলিতে বুলিতে প্ৰাণপণে স্তন চােযে, শ্যামা সেই অবস্থাতে চরকির মতো ঘুরিয়া বেড়ায়, ভাতেব হাঁড়ি নামায়, তরকারি চড়ায়, ছাদে গিয়া মিস্ক্রির দেয়াল গাঁথা দেখিয়া আসে, ভাঙা কড়াইয়ে করিয়া চুন নেওয়ার সময় উঠানে এক খাবলা ফেলিয়া দেওয়ার জন্য কুলিকে বকে, শীতলকে আপিসের ও বিধানকে স্কুলের ভাত দেয়, মাসকাবারি কয়লা আসিলে আড়তদারের বিলে নাম সই করে, খরচের হিসাব লেখে, ছোটাে খোকার কঁথা কাচে (রাণী এ কাজটা করে না, তাৰ বয়স অল্প এবং সে একটু শৌখিন) আবার মামার সঙ্গে, প্রতিবেশী নকুড়বাবুর স্ত্রীর সঙ্গে গল্পও করে। চোখের দিকে তাকাও, বাৎসল্য নাই, স্নেহমমতা নাই, শ্ৰান্তি নাই—কিছুই নাই! শ্যামা সত্যই যন্ত্র নাকি ? মামা বলে, খেটে খেটে মরবি নাকি শ্যামা ? যা, যা তুই যা, মিস্ত্রির কাজ আমি দেখবখন। শ্যামা বলে, না মামা, তুমি বুড়ো মানুষ, তোমার কেন এ সব ঝঞ্ঝাট পোয়াবে ? যা সব বজাত মিস্ত্ৰি, বজাতি করে মালমশলা নষ্ট করবে, তুমি ওদের সঙ্গে পারবে কেন ? তাছাড়া, নিজের চোখে না দেখে আমােব স্বস্তি নেই কাজ কতদূর এগুলি,—ঘর তোলার সাধ কী আমার আজকেরা! তুমি ঘরে গিয়ে বোসো মামা-পিঠে কোথায় ব্যথা বলছিলে না? রাণী বরং একটু তেল মালিশ করে দিক। *ზა: শীতল কোনোদিকে নজর দেয় না, কেবল সে যে পুরুষ মানুষ এবং বাড়ির কর্তা এটুকু দেখাইবার জন্য বলা নাই কওয়া নাই মাঝে মাঝে কর্তৃত্ব ফলাইতে যায়। গভীর মুখে বলে, এখানে জানালা হবে বুঝি, দেয়ালের যেখানে ফাক রাখছ? মিস্ত্রিরা মুখ টিপিয়া হাসে। শ্যামা বলে, জানালা হবে না তো কি দেয়ালে ফ্রাক থাকবে ? তাই বলছি-শীতল বলে,—জানালা হবে কটা ? তিনটে মোটো? না না, তিনটে জানালায় আলো বাতাস খেলবে না। ভালো, – ওহে মিস্ত্রি এইখানে আরেকটা জানােলা ফুটিয়ে দাও,-—এদিকে একটাও জানালা কবনি দেখছি। শ্যামা বলে, ওদিকে জানালা হবে না, ওদিকে নকুড়বাবুর বাড়ি দেখছি না? আর বছর ওরাও দোতলায় ঘর তুলবে, আমাদেব ঘেঁষে ওদের দেয়াল উঠবে,-জানােলা দিযে তখন করবে। কী? জান না বোঝা না ফেঁাপিবদ্যালালি কোরো না বাবু তুমি। শীতল অপমান বোধ করে কিন্তু যেন অপমান বোধ করে নাই এমনিভাবে বলে, তা কে জানে ওরা আবার ঘর তুলবে!--হা হাঁ, ওখানে আস্ত ইট দিও না মিস্ত্রি, দেখছি না। বসছে না। কতখানি ফাক রয়ে গেল ভেতরে ? দুখানা আদ্ধেক ইট দাও, দিয়ে মাঝখানে একটা সিকি ইট দাও। মিস্ক্রিরা কথা বলে না, মাঝখানেব ফাকটাতে কয়েকটা ইটের কুঁচি দিয়া মশলা ঢলিয়া দেয়, শীতল আড়াচোখে চাহিয়া দ্যাখে শ্যামা কুর চােখে চাহিয়া আছে। শীতল এদিকে ওদিকে তাকায়, হঠাৎ শ্যামার দিকে চাহিয়া একটু হাসে, পরীক্ষণে গভীর হইয়া নীচে নামিয়া আসে। দাঁড়াইয়া বিধানের একটু পড়া দ্যাখে,SumitaBot (আলাপ)পডিবার জন্য ছেলেকে শ্যামা গাত বৈশাখ মাসে নূতন টেবিল-চেয়ার কিনিয়া দিয়াছে—পড়া দেখিতে দেখিতে শীতল টের পায় শ্যামা ঘরে আসিয়াছে। তখন সে বিধানের বই