পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী। (a শীতল কিন্তু আজ চেচামেচি গলাগলি করিল না, কবিলে ভালো হইত, ছড়ি দিয়া শ্যামাকে আমন করিয়া হয়তো সে তাহা হইলে মাবিত না। মাথায় ছিটওলা মানুষ, যখন যা করে একেবারে চবম করিয়া ছাড়ে। শামার গায়ে ছডির দাগ কাটিয়া কাটিয়া বসিয়া গেল। মারিয়া শীতল বলিল, বজাত মাগি, তোকে আমি কী শাস্তি দিই দ্যাখ। এই গেল এক নম্বর। দুন্ নম্বর শাস্তি তুই জন্মে ভুলবি না। শাস্তি ? আবাবা কী শাস্তি শীতল তাহাকে দিবে? তাহার স্বামী ? বিবাহের পরেই শ্যামা টের পাইয়াছিল শীতলের মাথায় ছিট আছে। পাগলের কাণ্ডকারখানা কিছু বুঝিবার উপায় নাই। পরদিন দশটার সময় নিযামিতভাবে স্নানাহার শেষ কবিয়া শীতল আপিসে গেল। বাবোটা-একটাব সমস্যা ফিরিয়া আসিল। শ্যামাকে আড়ালে ডাকিয় তাহার হাতে দিল একতাড়া নোট । শ্যামা গুনিয়া দেখিল, এক হাজার টাকা। এ কেমন শাস্তি ? শীতল কী করিয়াছে, কী করিতে চায় ? এ কীসের টাকা ? --শ্যামা বুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করিল। শীতল বলিল, বাবু বোনাস দিয়েছেন। পরশু লাভেব হিসাব হল। কিনা, ঢের টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর, --- আমার জন্যেই তো সব ? তাই আমাকে এটা বোনাস দিযেছেন। এত টাকা । হাজাবা! আনন্দে শ্যামাব নাচিতে ইচ্ছা হইতেছিল। সে বলিল, বাবু তো লোক বড়ো ভালো - ২, ... কাল বড় বেগেছিলে না ? বড়ো মেরেছিলে বাবু কাল-পাষণের মতো। ভাগ্যে কেউ টেব পাৰ্যনি, নইলে কী ভাবত ?—-আপিস যাবে নাকি আবার ? যাই, কাজ প৬ে আছে। সাবধানে রেখে টাকা । এই বলিয়া সেই যে শীতল গেল, আব্ব আসিল না। দুদিন পরে মামা বনগা হইতে এক ফিবিয়া আসিল । বুকু কই মামা ? --শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল। মামা বলিল, কেন, শীতলের সঙ্গে আসেনি ? শীতল যে তাকে নিয়ে এল ? তখন সমস্ত বুঝিতে পারি যা শ্যামা কপাল চাপড়াইয়া বলিল, আমার সর্বনাশ হয়েছে মামা। কে জানিত পয়ত্ৰিশ বছর বয়সে চারটি সন্তানের জননী ; শামাব জীবনে এমন নাটকীয ব্যাপাব ঘটিবে ? 에5 বকুলকে সঙ্গে কবিয়া শীতল চলিয়া গিয়াছে। ফিবিধা যদি সে না আসে, এ শাস্তি শ্যামা সতাই জীবনে কখনও ভুলিবে না। মামা বলিল, অত ভাবছিস কেমন বল দিকি শ্যামা, রাগের মাথায় গেছে, রাগ পড়লে ফিরে আসবে। সংসারী মানুষ চাকবি-বাকরি ছেড়ে যাবে কোথা ? আব্বা ও-মেযে সামলানো কি তার কম্মো ? দুদিনে হয়রান হয়ে ফিরতে পথ পাবে না। শ্যামা বলিল, কী কাণ্ড সে করে গেছে , মা, সেই জানে। কাল অসময়ে আপিস থেকে ফিরে আমায় হাজার টাকার নোট দিয়ে গেল। বললে, আপিস থেকে বোনাস দিযেছে। কাল তো বুঝতে পারিনি মামা, হঠাৎ অত টাকা বোনাস দিতে যাবে কেন—লাভের যা কমিশন পাবার সে তো ও পায ? শ্যামার কিছু ভালো লাগে না, বুকের মধ্যে কী রকম করতে থাকে, কীসে যেন চাপিয়া ধরিয়াছে বুকটা। কাজ করিয়া করিয়া এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে যে অন্যমনে কলের মতো তাহা করিয়া ফেলা যায়। তাই, না হইলে শ্যামা আজ শূইয়া থাকিত, সংসার হইত। অচল। নটার সময় মিস্ত্রিরা কাজ করিতে আসিল, ঘব প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, আর সাত দিনের মধ্যে ঘর ব্যবহার করা চলিবে।