পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী G?GSe এমন কাজ করবে, মেশিন কেনার টাকাগুলো তাই দিলাম বিশ্বাস করে,-তেমনি শিক্ষা আমায় দিয়েছে, চোরের স্বভাব যাবে কোথা ? তোমায় বলে যাই বাছ, এ ইংরেজ রাজত্ব, কদিন লুকিয়ে থাকবে ? পুলিশে এখনও খবর দিইনি, বোলো তোমার স্বামীকে, কালকের মধ্যে টাকাটা যদি ফিরিয়ে দেয় এবারের মতো ক্ষমা কবব,— লোভে পড়ে কত ভালো লোক হঠাৎ আমন কাজ করে বসে, তাছাড়া এতকাল কাজ কবে প্রেসেব উন্নতি কবেছে, পুলিশে-টুলিশে দেবার আমার ইচ্ছা নেই। —বোলো এই কথা। কালকের দিনটা দেখে পরশু বাধ্য হয়েই পুলিশে খবর দিতে হবে।--কমলবাবু আবার শ্রান্তির একটা নিশ্বাস ফেলিয়া সহসা ভগবানের নামোচ্চারণ করেন, বলেন, টাকাটা যদি তোমার কাছে দিয়ে গিয়ে থাকে ? শ্যামা নীরবে মাথা নাড়ে। বিকালে মামা বাড়ি ফিবিলে শ্যামা তাহাকে সব কথা খুলিয়া বলিল, বাইশ বছর আগেকার কথা তুলিয়া কঁদিতে কঁাদিতে বলিল, খুঁজে পেতে এক পাগলের হাতে আমায় সঁপে দিয়েছিলে মামা, সারাটা জীবন আমি জ্বলে-পুড়ে মরেছি, কত দুঃখ কষ্ট সয়ে কত চেষ্টায় সুখের সংসার গড়ে তুলেছিলাম, এবার তাও সে ভেঙে খানখান করে দিয়ে গেল, যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে তো মারছেই, আমাদেবও উপায় নেই, না খেয়ে মরতে হবে এবার, ছেলে নিয়ে কী কবব আমি এখন, কী করে ওদের মানুষ করব ? বলিল, পালিয়ে পালিয়ে আব্ব বেড়াবে কদিন, ধরা পড়বেই। মেয়েটার তখন কী উপায় হবে। মামা, সঙ্গে থাকার জন্য ওকেও দেবে না তো জেলাটেল ? মামা বলিল, পাগল, ওইটুকু মেয়ের কখনও জেল হয় ? শীতলকে যদি পুলিশে ধরেই, বকুলকে তারাই বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। সমস্ত বাড়িতে বিপদের ছায়া পড়িয়াছে, বিধান সব বুঝিতে পাবে মুখখানা তাহার শুকাইয়া বিবৰ্ণ হইয়া গিযাছে। মণি কিছু বোঝে না, সেও অজানা ভয়ে স্তব্ধ হইয়া আছে। মিস্ক্রিরা বিদায় হইযা যাওয়ার পব সকলের কাছে চারিদিক যেন থমথম করিতে লাগিল। ছেলেদের খাইতে দেওয়া হইল না, উনানে আঁচ পডিল না, সন্ধ্যার সময় একটা লণ্ঠন জ্বলিশ" না দিয়া বাণী বাড়ি চলিয়া গেল। লন্ঠনের সামনে বিপন্ন পরিবারটি স্নানমুখে বসিয়া রহিল নীরবে, ছেলেরা ক্ষুধায় কাতর হইলে শ্যামা বাটিতে করিয়া তাহদের সামনে কতগুলি মুড়ি দিয়া মুখ ঘুরাইয়া বসিল। তাহার সমস্ত সাধ-আহাদ আশা-আনন্দ ভাঙিয়া পড়িয়াছে, কত বড়ো ভবিষ্যৎকে সে মনে মনে গড়িয়া বাখিয়াছিল শ্যামা ভিন্ন কে তাহার খবর বাখে ? পাগলের মতো উদয়াস্ত সে খাটিয়া গিয়াছে, শীতল তো শুধু টাকা আনিয়া দিযা পালাস, কোনোদিন একটি পরামর্শ দেয় নাই, এতটুকু সাহায্য কবিতে আসে নাই-সংসার চালাইয়াছে সে, ছেলেমেযে মানুষ করিয়াছে সে, বাড়িতে ঘব তুলিতেছে সে, বিপদে-আপদে বুক দিয়া পড়িয়া তাহার বুকেব। নীড়কে বঁচাইয়াছে সে। এবার কী হইবে ? বিধবা হইলে বুঝিতে পারিত ভগবান মারিযাছেন, উপায় নাই। বিনামেঘে বজ্ৰাঘাতেব মতো অকারণে এ কী হইয়া গেল? একটু কলহের জন্য মারি যা সর্বাঙ্গে কালশিবা ফেলি, ও শীতলের সাধ মিটিল না, সুখের সংসারে আগুন ধবাইয়া দিযা গেল ? মামা ঘনঘন তামাক টানে। ঘনঘন বলে, এমন উন্মাদ সংসারে থাকে? মামা বড়ো উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছে। শ্যামা ও তাহার ছেলেদেব ভারটা এবার মামার উপরেই পড়িল বইকী? হায় সে সন্ন্যাসী বিবাগি মানুষ বাইশ বছর সংসারের সঙ্গে তাহার সম্পর্ক নাই, হতভাগাটা তাহাকে এ কী দুরবস্থায় ফেলিয়া গেল ? বুড়া বয়সে এই সবই তাহার অদৃষ্টে ছিল নাকি? মামা এই সব ভাবে, অরণ্যে প্রান্তরে জনপদে তাহার দীর্ঘ যাযাবর জীবনের স্মৃতি মনে আসে, একটা গেরুয়া কাপড় পরো, গায়ে