পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VO মানিক রচনাসমগ্ৰ একটা গেরুয়া আলখাল্লা চাপাও, গলায় ঝুলাইয়া দাও কতগুলি রুদ্রাক্ষ ও স্বফটিকের মালা, তারপর যেখানে খুশি যাও, আতিথা মিলিবে অর্থ মিলিবে, ভক্তি মিলিবে, কত নারী দেহ দিয়া সেবা করিয়া পুণ্য অর্জন কবিবে। ধর্মিকের অভাব কীসের? আজি ধনীর অতিথিশালায় শ্বেতপাথরের মেঝেতে খড়ম খটখট করিয়া হাঁটা, কাল সম্মুখে অফুরন্ত পথ, ভুট্টাক্ষেতের পাশ দিয়া, গ্রামের ভিতর দিয়া, বনেব নিবিড় ছায়া ভেদ করিয়া, পাহাড় ডিঙাইয়া মরুভূমির নিশ্চিহ্নতায় ; সন্ধ্যায় গভীর ইদাবার শীতল জল, সদ্য-দোয়া ঈষদুষ্ণ দুধ, ঘিয়ে-ভিজানো চাপাটি, আর ভীরু সলজা গ্ৰাম্য কন্যাদের প্রণাম-—একজনকে বাছিয়া বেশি কথা বলা বেশি অনুগ্রহ দেখানে,-কে বলিতে পারে? মামা ভাবে, বুড়ো বয়সে দেশে ফিরিবার বাসনা তাহাব কেন হইয়াছিল? আসিতে না আসিতে কী বিপদেই জড়াইয়া পড়িল। মুখে কিন্তু মামা অন্য কথা বলে, বলে, এমন উন্মাদ সংসাবে থাকে? আমি এসেছিলাম বলে তো, নইলে তুই স্ত্রীপুত্ৰকে কার কাছে ফেলে যেতি রে হতভাগা ? একেবারে কােণ্ডজ্ঞান নেই? স্ত্রীপুত্রকে পাবেব ঘাড়ে ফেলে আপিসের টাকা চুরি করে মেয়ে নিয়ে তুই পালিযে গেলি ? শ্যামাই শেষে বিরক্ত হইয়া বলে, এখন আর ও কথা বলে লাভ কী হবে মামা ? কী করতে হবে না হবে পরামর্শ করি এসো। অনেক বিকম পাবামর্শই তাহারা করে। মামা একবার প্রস্তাব করে যে শ্যামার কাছে কিছু যদি টাকা থাকে, হাজার দুই তিন, ওই টাকাটা কমলবাবুকে দিয়া এখনকাব মতো ঠান্ডা কবা যাক, পাবে শীতল ফিরিঘা আসিলে যাহা হয় হইবে। শ্যামা বলে তাহাব টাকা নাই, টাকা সে কোথায় পাইবে ? তা ছাড়া শীতল যে ফিরিয়া আসিবে তার কী মানে আছে? তখন মামা বলে, বাড়িটা বিকি করিষা কমলবাবুকে টাকাটা দিয়া দিলে কেমন হয় ? শীতল তাহা হইলে পুলিশের হাত হইতে বাঁচে। শ্যামা বলে যে শীতল যদি ফাসিও যায় বাডি সে বিক্ৰয় কবিতে দিবে না। এই কথা বলিয়া তাহার খেযাল হয় যে ইচ্ছা থাকিলেও বাড়ি সে বিক্ৰয় করিতে পরিবে না, বাড়ি শীতলেব নামে। শুনিয়া মামা একেবাবে হতাশ হইয়া বলে যে তা হলেই সর্বনাশ, টাকাগুলি খরচ করিযী শীতল ফিরিয়া আসিযই বাডিটা বিক্ৰয় করিয়া নিশ্চয় কমলবাবুর টাকাটা দিয়া বাঁচিবাব চেষ্টা করিবে। শ্যামার মুখ শুকাইয়া যায, সে কঁদিতে থাকে । পরামর্শ করিযী কিছুই ঠিক করিতে পারা যায় না, বেশির ভাগ আরও বেশি বেশি বিপদের সম্ভাবনাগুলি আবিষ্কৃত হইতে থাকে। শেষে মামা একসময় বলে, শ্যামা, সর্বনাশ করেছিস! --আপিসের টাকা থেকে শীতল তোকে দিয়ে যাযনি হাজাব টাকা ? শ্যামা বলে, এ কথা জিজ্ঞেস করছি কেন মামা ? মামা বলে, কেন করছি তুই তার কী বুঝবি, পুলিশে বাড়ি সার্চ করবে না ? নোট টােটা যদি দিয়ে গিয়ে থাকে তা বেরিয়ে পড়বে না ? তোকে ধরে তখন যে টানাটানি করবে। রে ? শুনিয়া শ্যামার মুখ পাংশু হইয়া যায়, বলে, কী হবে মামা। তবে ? এবাব মামা সুপরামর্শ দেয়, বলে, দে দে, আমায় এনে দে টাকাগুলো, দাখ দিকি কী সর্বনাশ করেছিলি? ওরে নোটেব যে নম্বর থাকে, দেখামাত্র ধরা পড়বে ও টাকা কমলবাবুর! ছি:৷ ছি, তোর একেবাবে বুদ্ধি নেই শ্যামা, দে নোটগুলো আমি নিয়ে যাই, কলকাতায় মেসে হোটেলে কদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকিগে। আস্তে আস্তে পারি তো নোটগুলো বদলে ফেলব, নয়ত দু-একবছর এখন লুকোনো থাক, পরে একটি দুটি করে বার করলেই হবে। সেই রাত্রেই নোটের তাড়া লইয়া মামা চলিয়া গেল। শ্যামা বলিল, মাঝে মাঝে তুমি এলে কী ক্ষতি হবে মামা, পুলিশ তোমায় সন্দেহ করবে?