পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী X96 শীতল বলিল, যদি করেন গোলমাল ? তা হলে টাকাও যাবে, জেলও খাটিব। তার চেয়ে আমার পালানোই ভালো। তোমায় যে টাকা দিয়ে গেছি। তাইতেই এখন চলবে, আমি পশ্চিমে চলে যাই, সেখানে দোকান-টোকান দিয়ে যা করে হোক রোজগারের একটা পথ করে নিতে পারব, মাঝে মাঝে দেশে এসে এমনি রাতদুপুরে তোমার সঙ্গে দেখা করে টাকা পয়সা দিয়ে যাব। তারপর দু-চার বছর কেটে গেলে বাড়িটা বিক্রি করে তোমরা এদিক-ওদিক কিছুদিন ঘুরে ফিরে আমি যেখানে থাকব। সেইখানে চলে যাবে। ছ হাজার টাকার তো মামলা, কে আর অতদিন মনে রাখবে, কমলবাবুও ভুলে যাবে, পুলিশেও খোঁজটােজ আর নেবে না। শ্যামা বলিল, বাড়ি বিক্লিক করব কী করে ? বাড়ি তো তোমার নামে। এতক্ষণে শীতল একটু হাসিল, বলিল, সে আমি তোমায় কবে দান করে দিয়েছি, খুকি হবার সময় আমার একবার অসুখ হয়েছিল না ? --সেইবার। আমার বাড়ি হলে কমলবাবু এতক্ষণ বাড়ি বিকি করে টাকা আদায় করে নিত। শ্যামার মনে হয়। শীতলকে সে চিনিতে পারে নাই। মাথায় একটু ছিট আছে, কেঁকের মাথায় হঠাৎ যা তা করিয়া বসে, কিন্তু বুকখানা স্নেহমমতায় ভরপুর। ঘণ্টা দুই পাবে সাব-ইন্সপেক্টর রজনী ধর আসিলেন। ভারী অমায়িক লোক। হাসিয়া বলিলেন, না মশাই না, দেশে দেশে আপনাকে আমরা খুঁজে বেড়াইনি, যত বোকা ভাবেন আমাদের অত বোকা আমরা নই, বি এ এম এ-টা আমরাও তো পাশ করি? আপনার বাড়িটাতে শুধু একটু নজর রেখেছিলাম, --আমি নই, আমি মশায় থানায় ঘুমোচ্ছিলাম—অন্য লোক। আপনি একদিন আসবেন তা জানতাম, -সবাই আসে, স্ত্রী-পরিবারের মায়া বড়ো মায়া মশায়। টাকাগুলো আছে নাকি পকেটে? দেখি একবার হাতড়ে। না থাকে তো নেই, টাকার চোস্য আপনাকেই আমাদের দরকার বেশি, আপনাকে পাওয়া আর দুশোটি টাকা পাওয়া সমান কি না। জানেন না বুঝি ? আপনার জন্যে কমলবাবু যে দুশো টাকা পুবস্কার জমা দিয়েছেন।-নইলে এই শীতের রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেও আপনার সঙ্গে এমন মিষ্টিমিষ্টি কথা কই ? শ্যামার কান্না, ছেলেমেয়ের কান্না, সর্বসমেত পাঁচটি প্রাণীর কান্নার মধ্যে শীতলকে লইয়া সাবইন্সপেক্টাব চলিযা গেল। মামা বলিল, কঁাদিসনে শ্যামা, কাল জামিনে খালাস করে আনব। তারপর চুপিচুপি বলিল, কী মুখ্য দেখলি ? টাকাগুলো পকেটে করে নিয়ে এসেছে! নিজেও গেলি টাকাও গেল, —গেল তো ? ছয় শীতলের জেল হইয়াছে দা বছর। শ্যামা একজন ভালো| উকিল দিয়াছিল। শীতলের এই প্রথম অপরাধ। টাকাও কমলবাবু প্ৰায় সব ফিরিয়া পাইয়াছিলেন,--শ্যামা যে হাজার টাকা লুকাইয়া ফেলিয়াছিল। আর শীতল যে শ-তিনেক খরচ করিয়াছিল, সেটা ছাড়া। জেল শীতলের ছমাস হইতে পারিত, এক বছর হওয়াই উচিত ছিল। কিন্তু শীতলের কিনা মাথায় ছিট আছে, বিচারের সময় হাকিমকে সে যেন একদিন কী সব বলিয়াছিল,— যে সব কথা মানুষকে খুশি করে না। তাই শীতলকে হাকিম কারাবাস দিয়াছিলেন আঠারো মাস আর জরিমানা করিয়াছিলেন দুহাজার টাকা।, --অনাদায়ে আরও দশ মাস কারাবাস। জরিমানা দিলে কমলবাবু অর্ধেক পাইতেন, অর্ধেক যাইত সরকারি তহবিলে। এই জরিমানার ব্যাপারটা শ্যামাকে কদিন বড়ো ভাবনায় ফেলিয়াছিল। মামা না থাকিলে সে কী করিত বলা যায় না, বকুলকে শীতল যেদিন গভীর মানিক ১ম-৫