পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী ԳV) বিধান কি আজও সে অপমান ভোলে নাই, বন্ধু বাড়ি আসিয়াছে তার সঙ্গে সে কথা বলিবে না? লাজুক শঙ্করের মুখখানা লাল হইয়া উঠিয়াছিল, শ্যাম টান দিয়া বিধানের বই কড়িয়া লইল, বলিল, নে, ঢ়েব বিদ্যে হয়েছে, যা দিকি দুজনে দোতলায়, বাতাস লাগবে একটু,-—যা গবাম এখানে! বিধান আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে গিযা বসিল। শ্যামা বলিল, তোমাদের ঝগড়া হয়েছে নাকি শঙ্কর ?--ও বুঝি কথা বলে না তোমাব সঙ্গে? কী পাগল ছেলে ।--না। বাবা, যেও না তুমি, পাগলটাকে আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ঘরে গিয়া শ্যামা ছেলেকে বোঝায়। বলে যে শঙ্করের কী দোষ ? শঙ্কর তো তাদের অপমান করে নাই, যে বাড়ি বহিয়া ভাব করিতে আসে তার সঙ্গে কি এমন ব্যবহার করিতে হয় ? ছিঃ! কিন্তু এ তো বোঝানোবা ব্যাপার নয, অন্ধ অভিমানকে যুক্তি দিয়া কে দমাইতে পাবে? ছেলেকে শ্যামা বাহিরে টানিয়া আনে, সে মুখ গোঁজ করিয়া থাকে। শঙ্কর বলে, আমি যাই মাসিমা । আহা বেচাবিব মুখখানা স্নান হইযা গিয়াছে! শ্যামা বাগি যা বলে, ছি খোকা ছি, এ কী ছোটো মন তোর, এ কী ছোটোলোেকর মতো ব্যবহার ? যা তুই আমার সামনে থেকে সরে!—বোসো বাবা তুমি, কটা কথা শুধোই,--দিদি পত্র দিয়েছে? সেখানে ভালো আছে সব ? তুমি যাবে না। দাৰ্জিলিং স্কুল বন্ধ হলে ? শ্যামা শঙ্করের সঙেগ গল্প কবে, হাঁটুতে মুখ গুজিয়া বিধান বসিয়া থাকে, কী ভযানক কথা ছেলেকে সে বলিয়াছে শ্যামাব তা খেয়ালও থাকে না। তারপর বিধান হঠাৎ কঁাদিয়া ছুটিয়া দোতলায় চলিয়া যায়, লাজুক শঙ্কর বিব্রত হইয়া বলে, কেন বকলেন ওকে ?—বলিয়া উশাখুশ করিতে থাকে। তারপর সেও উপৰে যায়। খানিক পরে শ্যামা গিয়া দেখিয়া আসে, দুজনে গল্প করিতেছে। সেই যে তাঁহাদেব ভাব হইয়াছিল, তারপর শশােকর প্রাযাই আসিত। শঙ্করের কারাম বোর্ডটি পড়িয়া থাকিত ও বাড়িতেই। উপবে খোলা ছাদে বসিয়া সারা বিকাল তাহাবা কাবাম খেলিত। বন্ধে তাহার সহিত বিধানের দাৰ্জিলিং যাওয়ার কথাটা শঙ্করই তুলিয়াছিল, বিষ্ণুপ্রিয ইহা পছন্দ করিবে না জানিয়াও শ্যামা আপত্তি করে নাই, তেমন আদর যত্ব বিধান না হয নাই পাইবে, সেখানে অতিথি ছেলেটিকে পেট ভরিয়া খাইতে তো বিষ্ণুপ্রিয়া দিবেই? কিন্তু রাজি হইল না বিধান! এ“সঙ্গে দাৰ্জিলিং গিয়া থাকবে কত লোভনীয় চিত্ৰই যে শওকত্ব তার সামনে আঁকিয়া ধরিল, বিধানকে বাঁকানো গেল না। যথাসময়ে শওকব চলিয়া গেল সেই শীতল পাহাডি দেশে, এখানে বিধানের দেহ গরমে ঘামাচিতে ভরিয়া গেল। মনে মনে শ্যামা বড়ো কষ্ট পাইল, অভাব-অনটনের অভিজ্ঞতা জীবনে তাহার পুরানো হইয়া আসিয়াছে, এমন দিনও তো গিয়াছে। যখন সে ভালো করিয়া দেহের লজাও আবরণ করিতে পারে নাই। কিন্তু আজ পর্যন্ত চারটি সন্তানের কোনো বড়ো সাধ শাম অপূর্ণ রাখে নাই,-আকাশের চাদ চাহিবার সাধ নয়, শ্যামার ছেলেমেয়ে অসম্ভব। আশা রাখে না ; শ্যামার মতো গরিবের পক্ষে পূবণ করা হয়তো কিছু কঠিন এমনি সব সাধারণ শখ, সাধাবণ আবদার। বিধান একবার সাহেবি পোশাক চাহিয়াছিল, তাদের ক্লাসের পাঁচছটি ছেলেন যে রকম বেশ ধবিয়া স্কুলে আসে, দোতলায় ঘরের জন্য ইটিসুরকি কিনিয়া শ্যামা তখন ফতুর হইয়া গিয়াছে। তবু ছেলেকে পোশাক তো সে কিনিয়া দিয়াছিল। শ্যামার চোখে আজকাল সবসময় একটা ভীরুতার আভাস দেখিতে পাওয়া যায়। শীতলের উপরেও কোনোদিন সে নিশ্চিন্ত নির্ভর রাখিতে পারে নাই, কমল প্রেসের চাকরিতে শীতল যখন ক্ৰমে ক্ৰমে উন্নতি করিতেছিল তা এখনও নয়, তবু তখন মনে যেন তাহার একটা জোর ছিল। আজ সে জোর নষ্ট হইয়া গিয়াছে। চোরের বউ ? জীবনে এ ছাপ তাহার ঘুচিবে না, স্বামীর অপরাধে মানুষ তাহাকে