পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in মানিক রচনাসমগ্ৰ ما S۹ মনে হয় বকুলকে বুঝি হারাণ ডাক্তার ভালোবাসে। শ্যামা জানে তা সত্য নয়। এ বাড়িতে আসিয়া হারাণের বুঝি অন্য এক বাড়ির কথা মনে পড়ে, শ্যামা আর বকুল বুঝি তাহাকে কাদের কথা মনে পড়াইয়া দেয়। বকুলকে কাছে টানিয়া হারাণ যখন তাহার মুখের দিকে তাকায় শ্যামাও যেন তখন আর একজনকে দেখিতে পায়, গায়ে শ্যামার কাটা দিয়া ওঠে। এ বাড়িতে রোগী দেখিতে আসিবার জন্য হারাণ। তাই লোলুপ, একবার ডাকিলে দশবার আসে, না ডাকিলেও আসে। মানুষকে অপমান না কবিয়া যে কথা বলিতে পারে না, বোগীব অবস্থা সম্বন্ধে আত্মীয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে পর্যন্ত যে সময় সময় আগুনের মতো জুলিয়া ওঠে, বহুদিন আগে শ্যামার কাছে সে পোষ মানিয়াছিল। শ্যামা তখন হইতে সব জানে। একটা হাবানো জীবনের পুনরাবৃত্তি এইখানে হারাণেব আরম্ভ হইযাছিল, একান্ত পৃথক, একান্ত অমিল পুনরাবৃত্তি, তা হােক, তাও হারাণের কাছে দামি। শ্যামা ছিল হারাণেব মেয়ে সুখময়ীর ছায়া, সুখময়ীর কথা শ্যামা শুনিয়াছে। এই ছায়াকে ধরিয়া হারাণ শ্যামার সমান ব্যাসের সময় হইতে সুখময়ীর জীবনস্মৃতির বাস্তব অভিনয় আবিষ্কাব করিয়াছে—বকুলের মতো একটি মেয়েও নাকি সুখময়ীর ছিল। শ্যামার ছেলেরা তাই হারাণের কাছে মূল্যহীন, ওদের দিকে সে চাহিয়াও দাখে না। এ বাড়িতে আসিয়া শ্যামা ও বকুলকে দেখিবার জন্য সে ছটফট কবে। অথচ শ্যামা ও বকুলকে সে স্নেহ কবে কিনা সন্দেহ। ওরা তুচ্ছ, ওরা হারাণের কেউ নয়, হাবাণ পুলকিত হয় শ্যামার কণ্ঠ ও কথা বলার ভঙ্গিতে,--শ্যামার চলন দেখিয়া, বকুলের দুরন্তাপনা ও চাঞ্চলা দেখিয়া তাহার মোহের সীমা থাকে না। মমতা যদি হারাণের থাকে তাহা অবাস্তবতার প্রতি—-শ্যামাব উচ্চারিত শব্দ ও কয়েকটি ভঙ্গিমায় এবং বকুলের প্রাণেব প্রাচুর্যে-মানুষ দুটিকে হারাণ। কখনও ভালোবাসে নাই , শোকে যে এমন জীৰ্ণ হইয়াছে সে কবে বক্তমাংসেব মানুষকে ভালোবাসিতে পারিয়াছে ? ? শ্যামা তাই হারাণেব সঙ্গে আত্মীযতা করিতে পারে নাই, হাবাণেব কাছে অনুগ্রহ দাবি করিতে আজও তাহাব লজ্জা কৰে। বিধানের চিকিৎসা ও ওষুধের বিনিময়ে কাঞ্চনমুদ্রা দিবােব অক্ষমতা জানাইবাব সময হারাণ ডাক্তাবের কাছে শ্যামা তাই কঁাদিয়া ফেলিল। বিধানেৰ পৰা অসুখে পড়িল বকুল। বকুলেব অসুখ ? বকুলেব অসুখ এ বাড়িতে আশ্চর্য ঘটনা। মেয়েকে লইয়া পালাইয়া গিয়া সেই যে শীতল তাহার জ্বর করি যা আনিয়াছিল। সে ছাড়া জীবনে বকুলের কখনও সামান্য কাশিটুকু পর্যন্ত হয় নাই, রোগ যেন পৃথিবীতে ওর অস্তিত্বে সংবাদই রাখিত না। সেই বকুলের কী অসুখ হইল এবার? ছোটােখাটাে অসুখ তো ওবা শরীবে আমল পাইবে না। প্রথম কদিন দেখিতে আসিয়া হারাণ ডাক্তাব কিছু বলিল না, তারপর বোগেব নামটা শুনাইয়া শ্যামাকে সে আধমরা করি যা দিল।। বকুলে ব টাইফয়েড হইয়াছে। জান মা, এই যে কালকেতা শহর এ হল টাইফযেডেব ডিপো, এবার যা শুরু হয়েছে চাদিকে জীবনে এমন আর দেখিনি, তিরিশ বছর ডাক্তারি করছি সাতটি টাইফয়েডের রোগীর চিকিচ্ছে কখনও আর করিনি একসঙ্গো,-- এই প্রথম। প্রযোজন মেয়েটার এত কম, নিজের অস্তিত্বের আনন্দেই মেয়েটা সর্বদা এমন মশগুল যে ওর দিকে তাকানোর দরকাব শ্যামার হয় না। কিন্তু বকুলের কিছু হইলে শ্যামা সুদসমেত তাহাকে তাহার প্রাপ্য ফিরাইয়া দেয়, কী যে সে উতলা হইয়া ওঠে বলিবার নয়। বকুলের অসুখে সংসার তাহার ভাসিয়া গেল, কে বঁধে কে খায়, কোথা দিয়া কী ব্যবস্থা হয় কোনোদিকে আর নজর রহিল না, অনাহারে অনিদ্রায় সে মেয়েকে লইয়া পডিয়া রহিল। এদিকে রাণীও বকুলের প্রায় তিনদিন পরে একই রোগে শয্যা লইল। মামা কোথা হইতে একটা খোট্টা চাকর আর উড়িয়া বামুন জোগাড় করিয়া আনিল, পোড়া ভাত আর অপক ব্যঞ্জন খাইয়া মামা বিধান আর মণির দশা হইল রোগীর মতো, শ্যামার কোলের