পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in br○ মানিক রচনাসমগ্ৰ কনক এমনিভাবে কথা বলিত, উলটাপালটা, পুবপশ্চিম। বলিত, এক স্বাধীনভাবে সে মহা স্ফুর্তিতে আছে, আবােব বলিত একা একা থাকতে ভালো লাগে না দিদি, আত্মীয়স্বজন দু-চারটি কাছে না থাকলে বডড যেন ফাঁকা-ফ্যাক লাগে,--নয় ? শ্যামা বুঝিত, আনন্দে আহদে সোহাগে সে ডগমগ, কথা সে বলে না। শুধু বকবক কবে, ওর কথার কোনো অর্থ নাই। কনকের বয়স বোধ হয় ছিল কুড়ি - বাইশ বছর, শ্যামা যে বয়সে প্রথম মা হইয়াছিল--এই বয়সে বাউটির অবিশ্বাস্য খুঁকি-ভাবে শ্যামা থা বনিয়া যাইত, কেমন রাগ হইত শ্যামার। মেয়েমানুষ এমন নিৰ্ভয়, এমন নিশ্চিন্ত, এমন আহুদি ? এই বুদ্ধি-বিবেচনা লইয়া সংসারে ও টিকিবে কী করিয়া ? বড়োলোকের মেয়ে বুঝি এমনি অসার হয় ? তবু, বিরুদ্ধ সমালোচনা-ভরা শ্যামার মন, কী দিয়া কনক যেন আকর্ষণ করিত। চৌবাচ্চাব ধারে ওরা যখন পবিস্ম্পরের গাযো জল ছিটাইয়া হাসিযা লুটাইয়া পড়িত, কনকোব স্বামী যখন তাহাকে শূন্যে তুলিয়া চৌবাচ্চায় একটা চুবানি দিয়া আবার বুকে করি যা ঘবে লইয়া যাইত, খানিকপরে শুকনো কাপড় পরিয়া আসিযা কনকেবা কাজের ছন্দে আবার অকাজের ছন্দ মিশিতে থাকিত তখন শ্যামাব-কে জানে কী হইত শ্যামার, চোখেব জল গাল বহিযা তাহার মুখেব হাসিতে গাডাইয়া আসিত। কনকের স্বামী আপিস গেলে সে নীচে নামিয়া বলিত, সব দেখে ফেলেছি কনক । কনকের লজা নাই, সে হাসিয়া ফেলিত,--জ্বলিযে মারে দিদি, আপিস গেলে যেন বাঁচি । দোতলাব ঘবখানা আব্ব ছাদটুকু ছিল শ্যামাব গৃহ, জিনিসপত্র-সহ সে বাস করিত ঘরে, বাঁধিত ছাদে, একখানা করোগেটেড টিনেব নীচে। পাশে শুধু নকুডবাবুবা ছাদ নয, আশেপাশের আবও কযেক বাড়ির ছাদ হইতে উদয়াস্ত শ্যামাব সংসারের গতিবিধি দেখা যাইত। প্রথম প্রথম অনেকগুলি কৌতুহলী চোখ দেখিতেও ছাডিত না, যখন তখন ছাদে উঠিযা নকুড়বাবুব বউ জিজ্ঞাসা কবিত, কী করছি বকুলেব মা ? শ্যামা বলিত, রাঁধছি দিদি-বলিত, সংসাবের কাজকর্ম কবছি দিদি,- কী রাঁধলেন এ বেলা ? রাধিত এবং সংসাবেব কাজকর্ম করিত, শ্যামা আর কিছু কবিত না ... ধানকলের ধূমোদগাৰী চোঙটার দিকে চাহিয়া থাকিত না? রাত্রে ছেলেমেযেরা ঘুমাইযা পড়িলে জাগিয়া বসিয়া থাকিত না, হিসাব করিত না দিন-মাস-সপ্তাহের, টাকা-আনা-পয়সার ? উদভ্ৰান্ত চিন্তাও শ্যামা কবিত, নিশ্বাসও ফেলিত। জননীস্বত্ব কেমন যেন নীবন্স অর্থহীন মনে হইত। শ্যামার কাছে। কোথায় ছিল এই চারটি জীব, কী সম্পর্ক ওদের সঙেগ তাহাব, অসহাযা স্ট্রালোক সে, মেরুদণ্ড-বাকানো এ ভার তার ঘাড়ে চাপিয বসিয়াছে কেন ? কীসের এই অন্ধ মায়া ? জগজননী। মহামায়া কীসের ধাধায় ফেলিয়া তাঁহাকে দিয়া এত দুঃখ বৰণ কবইতেছেন ? সুখ কাকে বলে একদিনেব জন্য সে তাহা জানিতে পারিল না, তাহার একটা প্ৰাণ নিঙড়াইয়া চারটি প্রাণীকে সে বঁাচাইযা রাখিয়াছে,-কেন ? কী লাভ তাতার ? চোখ বুজিয়া সে যদি আজ কোথাও চলিযা যাইতে পাবিত। -- ওরা দুঃখ পাইবে, না খাইসা হয়তো মবিয়া যাইবে, কিন্তু তাহাতে কী আসিয়া যায তাব ? সে তো দেখিতে আসিবে না। পেটের সন্তানগুলির প্রতি শ্যামা যেন বিদ্বেষ অনুভব করিত,--সব তাহার শত্ৰ, জন্মজন্মান্তবের পাপ । কী দশা তাহার হইযাছে ওদেব জন্য। শেষেব দিকে শ্যামা আর চালাইতে পারিত না, মাসিক বারো টাকায় এতগুলি মানুষের চলে না। তাই কুড়ি টাকা ভাড়ায সমস্ত বাডিটা কনকলতাকে ছাড়িযা দিয়া সে বনগাঁয় রাখালেব আশ্রয়ে চলিয়া আসিয়াছে। বডো রাস্তা ছাডিয়া ছোটো রাস্তা, পুকুরের ধারে বিঘাপরিমাণ ছোটাে একটি মাঠ, লাল ইটের একতলা একটি বাডি ও কলাবাগানের বেড়ার মধ্যবর্তী দুহাত চওড়া পথ, তারপর রাখালের পাকা ভিত টিনের দেয়াল ও শনের ছাউনির বৈঠকখানা। তিনখানা তক্তপোেশ একত্র করিয়া তার উপরে শতরঞ্চি বিছানাে আছে। তিন জাতের মানুষের জন্য খুঁকা আছে তিনটি। কাঠের একটা আলমারিতে পুরাতন