পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী br○ তারও বিদ্যুতেব আলো চাই। বাড়িটা তাদের পছন্দ হইয়াছে, স্থায়ীভাবে তারা ওখানে রহিয়া গেল, এক কাজ করিলে হয় না দিদি ? খরচপত্র করিয়া তারা বিদ্যুৎ আনাক, মাসে মাসে বাডিভান্ডার টাকায় সেটা শোধ হইবে ? এই পত্র পাইয়া শ্যামা বড়ো চিন্তায় পড়িয়া গেল। এখানে তাহার নানা রকম খরচ আছে, স্কুলের মাহিনা, জামাকাপড় এ সব তাহাকেই দিতে হয়, এটা-ওটা খুচরা খরচও আছে অনেক, বাড়িভাড়ার টাকা না আসিলে সে করিবে কী? অথচ বিদ্যুৎ আনিতে না দিলে ওরা যদি অন্য বাড়িতে উঠিয়া যায়? সঙ্গে সঙেগ আবার কি ভাড়াটে মিলিবে ? শেষে শ্যামা মিনতি করিয়া কনককে চিঠি লিখিল। লিখিল ওই কুড়িটি টাকা তাহার সম্বল, ওই টাকা কাটির জোরে সে পরেব বাড়ি পড়িয়া আছে, বাডিতে বিদ্যুৎ আনিবার তার ক্ষমতা কই ? শ্যামা যে কী দুঃখে পডিয়াছে কনক যদি তাহা জানিত--- এ চিঠি ডাকে দিবারও প্রয়োজন হইল না, কনকলতার স্বামীর নিকট, হইতে সবিনয় নিবেদন ভণিতার আর একখানা পত্ৰ আসিল, শ্যামার বাডি হইতে আপিসে যাতায়াত করা বড়োই অসুবিধা, একটি ভালো বাড়ি পাওযা গিয়াছে শহবের মধ্যে, ইংরাজি মাসটাবী কাবাব হইলে তাহারা উঠিয়া যাইবে। কলিকাতার কেরানি-ভাড়াটের বাসা বদলানো রোগের খবর তো শ্যামা জানিত না, তাহার মুখ শুকাইয়া গেল। কনকলতাব উপব বাগ ও অভিমানের তাহার সীমা রহিল না। শ্যামার সঙ্গে না তাহাব অত ভাব হইয়াছিল, দুঃখের কথা বলিতে বলিতে শ্যামার চোখে জল আসিলে সে না। সাস্তুনা দিয়া বলিত, ভেবো না দিদি, ভগবান মুখ তুলে চাইবেন ? শ্যামা কত নিরুপায় সে তাহা জানে, কলিকাতায় বাডি ভাড়া কবি যাই সে থাকিবে তবু শ্যামার বাড়িতে থাকিবে না। এতকাল অসুবিধা ছিল না, আজ হঠাৎ অসুবিধা হাইমা গেল ? বাখালকে চিঠিখানা দেখাইযা শ্যামা বলিল, ঠাকুরজামাই, এবার কী হবে ? কুড়িটে কবে টাকা পাচ্ছিলাম, ভগবান তাতেও বাদ সাধলেন। " বাখাল বলিল, আহা, কলকাতায্য কি আব্ব ভাডাটে নেই। যাক না। ওরা, ফের ভাড়াটে আসবে,--- ওপবে একখানা নীচে তিনখানা ঘব, কুডি টাকায় ও বাড়ি লুপে নেবে না ? পাড়ার কাউকে চিঠি Wv3 - 2 হারাণ ডাক্তারকে শ্যামা একখানা পত্র লিখিয়া দিল। হারাণ জবাব দিল, ভযা নাই, বাডি শ্যামাব খালি থাকিবে না, দু-একমাসের মধ্যে আবার অবশ্যই ভাড়াটে জুটিবে। ইংরাজি মাসের পাঁচ ছয় তারিখে শ্যামা ভাড়ার টাকার মনিঅৰ্ডার পাইত, এবােব দশ তারিখ হইয়া গেল টাকা আসিল না। কনকলতাবা কোথায় উঠিয়া গিয়াছে শ্যামা জানিত না, নিজের বাডির ঠিকানাতেই সে তাগিদ দিয়া চিঠি লিখিল, ভাবিল, পোস্টাপিসে ওরা কি আবে ঠিকানা রাখিয়া যায নাই ? এ পত্রের কোনো জবাব শ্যামা পাইল না। মন্দা বলিল, দিচ্ছে ভাডা! এতকাল যে দিয়েছিল তাই ভাগিা সােল জেনো বউ ; কলকাতাব লোকে বাড়িভাড়া দেয় নাকি? একমাস দুমাস দেয়, তারপর যা দিন পারে থেকে অন্য বাড়িতে উঠে যায়,- করো ভাড়া আদায় মকদ্দমা করে! শ্যামা বিবৰ্ণ মুখে বলিল, আমার যে একটি পয়সা নেই। ঠাকুরঝি ? আমি যে ওই কটা টাকার ভরসা করছিলাম ? মন্দা বলিল, জলে তো পড়নি? তারপর বলিল, বাড়িটা বেচে দিলেই তো পার বউ ? এত কষ্ট সয়ে ও বাড়ি রেখে করবে কী? থাকতেও তো পারিছ না নিজে ? টাকাটা হাতে এলে বরং লাগবে কাজে,-তারপর কপালে থাকে বাড়ি আবার হবে, না থাকে হবে না!! দাদা বেরিয়ে এসে কিছু একটা করবে নিশ্চয়। নাও যদি করে