পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in して8 মানিক রচনাসমগ্ৰ বউ, ছেলে তো উপযুক্ত হয়ে উঠবে তোমার বাড়ির টাকা শেষ হতে হতে,-তখন আর তোমার দুঃখ কীসের ? মুখখানা মন্দা স্নান করিয়া আনিল, দুঃখের সঙ্গে বলিল, ও বাড়ি বেচিতে বলতে আমার ভালো লাগছে ভেবো না বউ,-আমার বাপের ভিটে তো। কিন্তু কী করবে বল ? নিরুপায় হলে মানুসকে সব করতে হয । বাড়িটা বিক্ৰয় করিয়া ফেলার কথা শ্যামা ভাবিতেও পারে না। একটা বাড়ি না থাকিলে মানুষের থাকিল কী? দেশে একটা ভিটা থাকিলেও শহরতলির ওই বাড়িটা সে বিক্ৰয় করিয়া ফেলিতে পারিত, কিন্তু দেশ পর্যন্ত কি শ্যামার আছে! যে গ্রামে সে জন্মিয়াছিল তার কথা ভালো করিয়া মনেও নাই। মামার ভিটেখানা নিজের মনে করিয়ছিল, বেচিয়া দিয়া মামা নিরুদ্দেশ হইয়া গেল। স্বামীর ওই একরাত্তি বাড়িটুকু সে পাইয়াছে, বুকের রক্ত জল-করা টাকায় বাড়ির সংস্কার করিয়াছে আজ তাও সে বিক্রি করিয়া দিবে? ও বাড়ির ঘরে ঘরে জমা হইয়া আছে তাহার বাইশ বছরের জীবন, ওইখানে সে ছিল বধু ছিল জননী, চারটি সন্তানকে প্রসব করিয়া ওইখানে সে বড়ো করিয়াছে, ও বাড়ির প্রত্যেকটি ইট যে তার চেনা, দেয়ালের কোথায় কোন পেরেকের গর্তে কবে সে চুন লেপিয়া দিয়াছিল তাও যে তার স্মরণ আছে, পরেব হাতে বাড়ি ছাড়িয়া দিয়া আসিতে তার মন যে কেমন করিয়াছিল জগতে কে তা জানিবে। হায়, ও বাড়ির প্রত্যেকটি ইটের জন্য শ্যামার যে অপত্য স্নেহ। অথচ এদিকেও আর চলে না। নাই বলিয়া শ্যামার হাতে কিছুই যে নাই অপাবে তাহা বিশ্বাস করে না, শ্যামাও মুখ ফুটিয়া বলিতে পারে না বকুলের জমানো একটি চকচকে আধুলি ছাড়া আর একটি তামার পয়সাও তাহার নাই। মাসকাবারে সুপ্ৰভা গোপনে বিধানের স্কুলেব মাহিনােটা দিয়া দিল, চাহিলে সুপ্রভার কাছে আরও কিছু হয়তো পাওয়া যাইত, শ্যামার চাহিতে লজ্জা করিল। এবার বড়ো শীত পড়িয়াছে। বিধানের গরমজামা গতবার ছোটাে হইয়া গিয়াছিল, ছেলেটা হু হু করিয়া বুড়ো হইয়া উঠিতেছে, এবছর নূতন একটা জামা কিনিয়া দিতে পারিলে ভালো হইত। আলোয়ানটাও তাহার ছিডিযা গিযাছে। ওদের বেশভূষা চাহিয়া দেখিতে শ্যামার চোখে জল আসে। বাড়িবার মুখে বছর বছর ওদেব পোশাক বদলানো দরকাব, পুরানো সেলাইকরা আঁটাে জামা পরিয়া ওদের ভিখারির সন্তানের মতো দেখায়, শুধু সাবান দিয়া জামা কাপড়গুলি আর যেন সাফ হইতে চায় না, কেমন লালচে রং ধরিয়া যায। পুজাব সময বাখাল ওদের একখানি করিয়া তাতের কাপড় দিয়াছিল, মানাইয়া পরা চলে এমন জামা নাই বলিয়া বিধান লজায় সে কাপড় একদিনও পরে নাই। মনটা শ্যামা ঠিক করিতে পারে না। মন্দার কথাগুলি মনের মধ্যে ঘুরিতে থাকে। রাখালের সঙ্গে একদিন সে এ বিষযে পরামর্শ করিল। রাখালও বাড়িটা বিক্লিক করার পরামর্শই দিল। বলিল বাড়িভাড়া দিবার হাঙ্গামা কী সহজ। অর্ধেক বছর বাডি হয়তো খালিই পড়িয়া থাকিবে, ভাড়াটে জুটিলেও ভাড়া যে নিয়মিত পাওযা যাইবে তারও কোনো মানে নাই, একেবারে না পাওয়াও অসম্ভব নয়। তারপুর না দিলে ভাড়াটে থাকিবে না,-ড্রেন নেওয়া হইয়াছে শ্যামার বাড়িতে ? এবার হয়তো ড্রেন না লইলে কপোরেশন ছাড়িবে না, সে অনেক খরচের কথা, শ্যামা কোথা হইতে খরচ করিবে ? বাড়ি-পোষা হাতি-পোষার সমান বউঠান, বাড়ি তুমি ছেড়ে দাও। বিধান রাত প্ৰায এগারোটা অবধি পড়ে, বকুল মণি ওরা ঘুমাইয়া পড়ে অনেক আগে। সেদিন রাত্রে শ্যামা বিধানকে বলিল, খোকা, সবাই যে বাড়ি বিক্লিক করে দিতে বলছে বাবা ? বিধানের সঙ্গে শ্যামা আজকাল নানা বিষয়ে পরামর্শ করে, ভবিষ্যতের কত জল্পনা-কল্পনা যে তাদের চলে তাহার অন্ত নাই। বিধান বলে, বড়ো হইয়া সে মস্ত চাকরি করিবে, তারপর শঙ্করের