পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ኪy-br- মানিক রচনাসমগ্ৰ হেডমাস্টার নিজে রাখালকে বলিয়াছেন বিধানের মতো ছেলে ক্লাসে দুটি নাই। শ্যামা আবাব আশা করিতে পারে, ধূসর ভবিষ্যতে আবার রঙের ছাপ লাগিতে থাকে। নাইবা রহিল তাহার স্বামীর নিকট আশাভরসা, একদিন ছেলে তাহাকে সুখী করিবে। কেবল, পিডিয়া পড়িয়া বিধান রোগ হইয়া যাইতেছে, এত রাত জাগিয়াও পড়ে! যেমন পরিশ্রম করে তেমন খাওযা ছেলেটা পায় না। পরের বাড়িতে কেইবা হিসাব করে যে একটা ছেলে দিবারাত্রি খাটিতেছে একটু ওব ভালোমতো খাওয়া-পাওয়া দরকার, দুধঘি-র প্রয়োজন ওব সবচেয়ে বেশি? শ্যামা কী করিবে? চাহিয-চিন্তিয়া চুরি করিয়া যতটা পারে ভালো জিনিস বিধানকে খাওয়ায় কিন্তু বেশি বাড়াবাডি করিতে সাহস পায় না। এ আশ্ৰয ঘুচিযা গেলে তাব তো উপায় থাকিবে না। মন্দা যখন চোঁচামেচি কবিতে থাকে ; এ কী কাণ্ড বাবা এ বাড়ির, ভূতেব বাড়ি নাকি এটা, সন্দেশ করে পাথরের বাটি ভরে রাখলাম বাটি অর্ধেক হল কী করে? এ কাজ মানুষের, বড়ো মানুষের, বিড়েলেও নেয়নি, ছেলেপিলেও খায়নি—নিয়ে দিব্যি আবার থাপিবে খুপরে সমান করে রাখার বুদ্ধি ছেলেপিলের হবে না!!--শ্যামাব বুকের মধ্যে তখন টিপচিপ করে। অর্ধেক? অর্ধেক তো সে নেয় নাই! যৎসামান্য নিয়াছে। মন্দা টেব পাইল কেমন করিয়া ? সুপ্ৰভা বলে, আমন করে বোলো না দিদি, লক্ষ্মী- যে নিয়েছে, খাবার জিনিস নিয়েছে তো, বড়ো লজ্জা পাবে দিদি। মন্দা বলে, তুই অবাক কারলি বোন, চোর লজ্জা পাবে বলে বলতে পাবিব না চুরির কথা ? সুপ্ৰভা মিনতি কবিযা বলে, বলে আব্ব লাভ কী দিদি প। এবাব থেকে সাবধানে বেখ্যে। তবু শ্যামা পবিশ্রমী সন্তানের খাদ্য চুরি করে। দুধ জ্বাল দিতে গিয়া সুযোগ পাইলেই দুধে সবে খানিকটা লুকাইয়া ফ্যালে, দুধ গরম করিলে সর তো যায় গলিযা টের পাইবে কে? বাঁধিতে বাঁধিতে দুখানা মাছভাজা শ্যামা শালপাতায় জডাইয়া কাপড়ের আড়ালে গোপন করে, ঘরে গিবা কখন সে তাহা লুকাইয়া আনে কে জানিবে? এমনি সব ছােটােখাটাে চুরি শ্যামা করে, গোপনে চুরি-করা খাবার বিধানকে খাওয়ায। একবাশ খানিকটা গাওয়া ঘি জোগাড় করিয়া সে বড়ো মুশকিলে পড়িয়াছিল। রাখালের ছেলেমেয়ে ছাড়া আর সকলকে একসঙ্গে বসিয়া খাইতে হয়, আগে অথবা পরে। একা খাইলেও রান্নাঘরে থাইতে হয়। ভাত, দাওয়ায় খাইতে হয়। জলখাবার, সকলের চোখের সামনে । কেমন করিযা ঘিটুকু ছেলেকে খাওয়াইবে শ্যামা ভাবিয়া পায় নাই। বলিয়াছিল, এমনি একটু-একটু খেয়ে ফ্যাল না খোকা, পেটে গেলেই পুষ্টি হবে। তাই কি মানুষ পারে, কঁচা ঘি শুধু খাইতে ? শেষে মুডির সঙ্গে মাখিযা দিয়া একটু একটু করিযী শ্যামা ঘিটুকুব সদগতি করিয়াছিল। খোকার তখন বাৎসরিক পৰীক্ষা চলিতেছে, একদিন সকালে শ্যামাকে ডাকিয়া রাখাল বলিল, জান বউঠান, শীতলবাবু তো খালাস পেয়েছেন আটদশ দিন হল। নকুড়বাবু পত্র লিখেছেন। তোমাদের কলকাতার বাড়িতে এসেই নাকি আছে, দিনরাত ঘরে বসে থাকে, কোথাও যায়-টায় না।-- পত্ৰখানা দেখি ঠাকুরজামাই ? নকুড়বাবু লিখিয়াছেন, শীতলের চেহারা কেমন পাগলের মতো হইয়া গিয়াছে, বোধ হয়। সে কোনো অসুখে ভুগিতেছে, এতদিন হইয়া গেল কেহ তাহার খোঁজ-খবর লইতে আসিল না দেখিয়া জ্ঞাতার্থে এই পত্র লিখিলেন। রাখাল বলিল, তোমাদের বাড়িতে না ভাড়াটে আছে বউঠান? শীতলবাবু ওখানে আছেন কী করে ? কী জানি ঠাকুরজামাই, কিছু বুঝতে পারছি না। আপনি একবার যান না। কলকাতা ?