পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী br。 কথাটা এখানে প্ৰকাশ করিতে শ্যামা রাখালকে বারণ করি যা দিল। বিধান পরীক্ষা দিতেছে, এখন এ সংবাদ পাইলে হয়তো সে উত্তেজিত হইয়া উঠিবে, ভালো লিখিতে পরিবে না।—বছরকার পরীক্ষণ সহজ তো নয়। ঠাকুরজামাই, এখন কি ওকে ব্যস্ত করা উচিত ? পাগলের মতো চেহারা হইযা গিয়াছে ? অসুখে ভুগিতেছে? বিধানের পরীক্ষা না থাকিলে শ্যামা নিজে দেখিতে যাইত। কিন্তু এখানে শীতল আসিল না কেন? লজ্জায় ? কী অদৃষ্ট মানুষটার!! দুবছৰ জেল খাটিয়া বাহির হইয়া আসিল, ছেলেমেয়ের মুখ দেখিবে, স্ত্রীর সেবা পাইবে, তার বদলে খালি বাড়িতে মুখ লুকাইয়া এক অসুখে ভুগিতেছে। এত লজ্জাই বা কীসের ? আত্মীয়স্বজনকে মুখ কি দেখাইতে হইবে না ? শনিবাবেল আগে রাখালের কলিকাতা যাওয়ার উপায় ছিল না। দুদিন ধরিয়া শ্যামা তাহার দুর্ভাগ্য স্বামীৰ কথা ভাবিল। ভাবিতে ভাবিতে আসিল মমতা । শ্যামা কি জানিত নকুডবাবুব চিঠিব। কথাগুলি যে ছবি তাহার মনে আঁকিয়া দিয়াছিল। পরীক্ষায় ব্যস্ত সন্তানেব মৃখেল দিকে চাহিয়া থাকিবার সমযও তাহা সে ভুলিতে পরিবে না, এত সে গভীর বিষাদ বোধ করিলে? শনিবাব রাখালের সঙ্গে সে কলিকাতা রওনা হইল। সঙ্গে লইল শুধু ফণীকে। বিধানকে বলিযা গেল সে বাডিটা দেখিযা আসিতে যাইতেছে, কলি ফেরানোর ব্যবস্থা করিয়া আসিবে, যদি কোনো মেরামতের দাবকাব থাকে তাও করি যা আসিবে। --আমাৰ কথা ভেবো না বাবা, ভালো করে। পৰীক্ষা দিও, কেমন ? ছোটো পিসিব কাছে খাবাব চেয়ে খেও ? আর বকুলকে যেন মেরো না খোকা। বাডি পৌঁছিতে সন্ধা পার হইযা গেল। সদর দরজা বন্ধ, ভিতবে আলো জ্বলিতেছে কিনা বোঝা যায় না, শীতেব বাত্রে সমস্ত পাড়াটাই স্তব্ধ হইয়া আছে, তার মধ্যে শ্যামাব বাডিটা যেন আবও নিঝুম। অনেকক্ষণ দিবাজা ঠেলা ঠেলিব পর শীতল আসিয়া দরজা খুলিল। রাস্তার আলোতে তাকে দেখিযা শ্যামা কঁাদিয়া ফেলিল। চোেখ মুছিয়া ভিতরে ঢুকিয়া সে দেখিল চারিদিক অন্ধকার, একটা আলোও কি শীতল জ্বালায় না। সন্ধাব পর ? ফণী ভযে তাহাকে সবলে আঁকড়াইয়া ধবিয়ছিল, অন্ধকার বাবান্দামা দাডাইয়া শ্যামা শিহরিয়া উঠিল। এমনই সন্ধ্যাবেলা একদিন সে এখানে প্রথম স্বামীব ঘর কবিতে আসিযাছিল, সেদিনও এমনি সারা বাডির আবহাওয়া তাহার নিশ্বাস রোধ কবিয়া দিতেছিল, সেদিনও তাহাব কান্না আসিতেছিল এমনিভাবে। শুধু, সেদিন বাবান্দায় জ্বালানো ছিল টিমটিমে একটা লািঠন । শীতল বিডবিড কবিয়া বলিল, মোমবাতি ছিল, সব খবচ হয়ে গেছে। বাখাল গিয মোড়েব দোকান হইতে কতগুলি মোমবাতি কিনিয়া আনিল। এই অবসরে শ্যামা হাতড়াইয়া হাতডাইয়া ঘরে গিয়া বসিয়াছে, বাহিরে বড়ো ঠান্ড শীতলকে দুটাে একটা কথাও সে জিজ্ঞাসা করিযাছে, প্ৰায় অবাস্তর কথা, জ্ঞাতব্য প্রশ্ন করিতে কী জানি শ্যামার কোন ভয় করিতেছিল। ভিতরে ঢুকিবাব আগে রাস্তার আলোতে শীতলের পাগলের মতো মূর্তি দেখিয়া শ্যামা তো কঁাদিয়াছিল, অন্ধকার ঘরে সে বেদনা কি ভয়ে পরিণত হইয়াছে? রাখাল ফিরিয়া আসিয়া একটা মোমবাতি জ্বালিয়া জানালায় বসাইয দিল। ঘরে কিছু নাই, তক্তপোশের উপর শুধু একটা মাদুর পাতা, আর ময়লা একটা বালিশ। মেঝেতে একবাশি পোড়া বিড়ি আর কতগুলি শালপাতা ছড়ানো। যে জামাকাপড়ে দুবছর আগে শীতল রাতদুপুরে পুলিশের সঙ্গে চলিয়া গিয়াছিল। তাই সে পরিয়া আছে। কাপড় বোধ হয় তাহার ওই একখানা, কী যে ময়লা হইয়াছে বলিবার নয়, রাত্রে বোধ হয় সে শুধু আলোয়ানটা মুড়ি দিয়া পড়িয়া থাকে, চৌকির বাহিবে অর্ধেকটা এখন মাটিতে লুটাইতেছে। এ সব তবু যেন চাহিয়া দেখা যায়, তাকানো যায় না। শীতলের