পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী VSE) হইয়াছে। হয়তো সে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত, অসুখের অজুহাতে সকলের দয়া ও সহানুভূতি, মমতা ও সেবা লাভ করার চেয়ে বড়ো আর তার কাছে কিছুই নাই। তবে সবটা শীতলের ফাঁকি নয়, শরীরে তাহার গোলমাল আছে, মাথাটা ভেঁাতা হইয়া যাওয়াও কাল্পনিক নয়, অসুখের যে বাড়াবাড়ি ভানটুকু সে করে তাব ভিত্তিও তো মানসিক রোগ। তবু ছেলেব পড চালানোর জন্য বাড়িটা শ্যামার হয়তো বিক্রয় করিতে হইত না, যদি বাঁচিয়া থাকিত হারাণ ডাক্তার। বিধানকে হারাণের বাড়ি পাঠাইয়া সে লিখিত, বাবা, জীবনপাত করে ওর স্কুলের পড়া সাঙ্গ করেছি, আর তো আমার সাধ্য নেই, এবার দিন বাবা ওর আপনি কলেজে পড়ার একটা ব্যবস্থা করে। হারাণ তা দিত। শ্যামার সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হারাণের অনেক বয়স হইয়াছিল, বিধানের স্কুলের পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সে বঁাঁচিয়া থাকিতে পারিল কই ? হারাণ মরিয়াছে। মরিবে না ? কপাল যে শ্যামার মন্দা! হারাণ বাঁচিয়া থাকিলে শ্যামাব ভাবনা কী ছিল? বাড়িতে শ্যামার ভাড়াটে আসিয়াছিল, তারা কুড়ি টাকা পাঠাইত শ্যামাকে, আর হারাণ পাঠাইত পচিশ। হাবাণেব মনি অর্ডারের কুপনে কোনো অজুহাতের কথা লেখা থাকিত না, শুধু অপাঠ্য হাতের লেখায় স্বাক্ষৰ থাকিত হারাণচন্দ্ৰ দে। শ্যামা তো তখন ছিল বড়োলোক। কয়েক মাসে শদেড়েক টাকাও সে জমাইয়া ফেলিয়াছিল। কেন মরিল হারাণ ? কত মানুষ সত্তর-আশি বছব বঁচিয়া থাকে, পযষট্টি পার হইতে ন হইতে হারাণের মবিবার কী হইয়াছিল ? শ্যামা কী কবিবে। - ভগবান যার প্রতি এমন বিবুপ বাড়ি বিক্রি করিয়া না দিয়া তার উপায় কী। শহরতলির বাড়ি, তাও বডো বাস্তার উপবে নয়, দক্ষিণ-খোলা নয়। একতলাটা পুরানো। বাড়ি বেচিয়া শ্যামা হাজাব পাচেক টাকা পাইয়াছিল। টাকা থাকিলে খরচ কেন বাড়িয়া যায় কে জানে। আগে ছোটে-বড়ো অনেক খরচ মন্দার উপর দিয়া চালানো যাইত, কিন্তু পুজি যার পাঁচ হাজার টাকা সে কেন তা পরিবে ? মন্দাই বা দিবে কেন ? দুধের কথাটা ধরা যাক। দুধ অবশ্য কোেনা হয় না, বাড়িতে পাচছটা গোরু আছে। কিন্তু গোরুর পিছনে খরচ তো আছে ? শ্যামার ছেলেমেয়েরা দুধ তো খায় ? শ্যামা পাঁচ হাজার টাকা পাওযার মাসখানেক পরে মন্দা বলে, পয়সাকড়ি হাতে নেই বউ, এ মাসেব খোলকুঁড়োবা দামটা দিয়ে দাও না,—সামনের মাসে আনাবোখন আমি । - কুঁড়ো কেনা হইবে কেন ? সেদিন যে দুমন চাল করা হইল তার কুঁড়ো গেল কোথায়? এবার মন্দা ধানভানার মজুরি নগদ দেয় নাই ; ধান যে ভানিয়াছে কুঁড়ো পাইয়াছে সে। মন্দা তাহা হইলে শ্যামার টাকাগুলি খরচ করাইয়া দিবার মতলব করিয়াছে ? ঘরের ধানের কুঁডো পরকে দিয়া শ্যামাকে দিয়া সে কুডো কিনাইবে! মাসের শেযে মুদি তাহার সাঁইত্রিশ টাকা পাওনা লইতে আসিয়াছে, মন্দা তিনখানা দশ টাকার নোট গুনিয়া দেয়, একটু ইতস্তত কবিয়া নগদ টাকাও দেয় একটা, তারপব শামাকে বলে, ছটা টাকা কম পড়ল, দাও না বউ টাকাটা দিয়ে ? বর্ষাকালে জল পড়িতে আরম্ভ হইয়াছে শ্যামার ঘর দিয়া দুখানা টিন বদলানো দরকার,-কে বদলাইবে টিন ? বাড়ি মন্দার, ঘরখানা মন্দার, শ্যামা তো শুধু আশ্রিতা অতিথি,-মন্দারই তো উচিত ঘরখানা সরাইযা দেওয়া। বলিলে মন্দা চুপ করিয়া থাকে। একটু পরেই সংসার-খরচের দুটি-একটি টাকা বাহির করিয়া দিবার সময় মন্দা এমন করিয়া বলিতে থাকে যে আর সে পারিয়া উঠিল না, এ যেন রাজাব বাড়ি ঠাওরাইয়াছে সকলে, খরচ খবচ খরচ, চারদিকে শুধু খরচ, খরচ ছাড়া আর কথা নাই—যে মনে হয় সে বুঝি শ্যামার ঘর সারাইয়া দিবার অনুরোধেরই জবাব দিতেছে এতক্ষণ পরে। বাড়ি বেচিয়া এমনি কত খরচ যে শ্যামার বাড়িয়াছে বলিবার না।