পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SVS মানিক রচনাসমগ্ৰ না জানুক, জামাই যে মেয়েকে পছন্দ করিয়াছে তাই শ্যামার ঢের। একটি শুধু ভাবনা তাহার আছে। বকুল তো পছন্দ করিয়াছে মোহিনীকে ? কে জানে কী পোড়া মন তাহার, টেকিঘরে সেই যে বকুল আর শঙ্করকে সে একসঙ্গে দেখিয়াছিল বারবার সে কথা তাহার মনে পড়িয়া যায়। বকুলের সেই রাঙা মুখ আর ছলছল চোখ সর্বদা চোখের সামনে ভাসিয়া আসে। পূজার সময় বকুলকে নেওয়ার কথা ছিল। পূজার ছুটির সঙ্গে আরও কয়েকদিনের ছুটি লইয়া মোহিনী ষষ্ঠীর দিন বনগা আসিল। বিধানের কলেজ অনেক আগে বন্ধ হইয়াছিল, কিন্তু সে শঙ্করের সঙ্গে কাশী গিয়াছে। শঙ্করের কে এক আত্মীয় থাকেন কাশীতে, সেখানে পূজা কাটাইয়া বিধান বাড়ি আসিবে। মোহিনী থাকিতে চায় না। অষ্টমীর দিনই বকুলকে লইয়া বাড়ি যাইবে বলে। সকলে যত বলে, তা কি হয় ? এসেছ, পুজোর কদিন থাকবে না?-লাজুক মোহিনী ততই সলজভাবে একটু হাসিয়া বলে, না, তার যাওয়াই চাই। কেন, যাওয়াই চাই কেন ? সকলে জিজ্ঞাসা করে। পনেরো দিনের ছুটি তো তুমি নিয়েছ, দুদিন এখানে থেকে গেলে ছুটি তো তোমার ফুরিয়ে যাবে না? শেষে মোহিনী স্বীকার করে, এটা তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার নয়, পিসিমার কুকুম অষ্টমীব দিন রওনা হওয়াই চাই। সুপ্ৰভা আসন্তুষ্ট হইয়া বলে, এ কী রকম হুকুম বাছা তোমার পিসির ? বেয়াই বর্তমানে পিসিই বা হুকুম দেবার কে ? বেয়াইকে টেলিগ্রাম করে আমরা অনুমতি আনিয়ে নিচ্ছি, লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত তুমি থাকবে এখানে। না, অনুমতি পিসি দেবে না, মাঝ থেকে শুধু চাটবে। কেহ আর কিছু বলে না, মনে মনে সকলে অসন্তুষ্ট হইয়া থাকে। বুঝিতে পারিয়া মোহিনী বডো অস্বস্তি বোধ করে। সুপ্রভার মেয়েকে সে বুঝাইবার চেষ্টা করে যে এ ব্যাপারে তাব কোনো দোষ নাই, পিসি তিনখানা চিঠিতে লিখিয়াছে অষ্টমীর দিন সে যেন অবশ্য অবশ্য রওনা হয়, কোনো কারণে যেন অন্যথা না ঘটে, কথা না শুনিলে পিসি বড়ো রাগ করে। সুপ্রভার মেয়ে শুনিয়া বলে, বোঝে। তো ভাই, আসার মতো আসা এই তো তোমার প্রথম, দুদিন না থাকলে কেমন লাগে আমাদের ? মোহিনী কয়েক ঘণ্টা ভাবে, তারপর সুপ্রভার মেয়েকে ডাকিয়া বলে, আচ্ছা দশমী পর্যন্ত থাকব। শনিয়া শ্যামা আসিয়া বলে, থাকলে পিসি বাগ করবে বলছিলে ? গিয়ে বুঝিযে বলবিখন।--মোহিনী বলে। শ্যামা। তবু ইতস্তত করে ; জোর করে ধরে রেখেছি বলে পিসি তো শেষে- ? মনটা শ্যামাব খুতখুঁত করে। কী যে জবরদস্তি সকলের! যাইতে দিলেই হইত। অষ্টমীর দিন। তার মেয়ে-জামাই, পিসির নাম শুনিয়া সে চুপ করিয়া গেল, সকলের এত মাথাব্যথা কেন? ওরা কি যাইবে পিসির রাগের ফল ভোগ করিতে ? ভুগিবে তার মেয়ে। সুপ্রভার মেয়ে একসময় তাহাকে একটা খবর দিয়া যায়। বলে, জানো মামি, জামাই তোমার তার পাঠালে পিসির কাছে। কী লিখেছে জানো, এখানে এক গণৎকার বলেছে পুজোর কদিন ওর যাত্রা নিষেধ। শ্যামা নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, কী সব কাণ্ড মা, আমার ভালো লাগছে না খুঁকি, এমন করে কাউকে রাখতে আছে! আমরা রেখেছি নাকি? জামাই নিজেই তো বললে থাকবে। তখন শ্যামা হাসিয়া সুপ্রভার মেয়ের চিবুক ধরিয়া বলে, আরেকটি জামাই তো আমার এল না। মা ?