পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী চুপচাপ শুইয়া থাকে, মাঝে মাঝে শীতলের পা চাটিয়া দেয়। কুকুরটাব সঙ্গে শীতলের বড়ো ভাব। কুকুরটাও তার বড়ো বাধ্য। শ্যামা কাছে আসিয়া মানুষ ও পশুর চোখ-বোজা নিবিড় তৃপ্তির। আলস্য চাহিয়া দ্যাখে । কিন্তু উপায় কী? শ্যামার আর কে আছে, কে তার জন্য বাহির হইবে উপার্জন করিতে? ধীরে ধীরে মিষ্টি করিযই কথাগুলো সে বলে, ভীত বিস্মিত চােখে তার মুখের দিকে চাহিয়া শীতল শুনিয়া যায়। কিছু সে যেন বুঝিতে পারে না, সংসার, কর্তব্য, টাকার অভাব, খোকাব পড়া সব জড়াইয়া শ্যামা যেন তাকে ভয়াবহ শাসনের ভযা দেখাইতেছে। শীতল মাথা নাড়ে, সন্দিগ্ধভাবে। সে কী করিবে? কী করিবার ক্ষমতা তার আছে? শিশুর মতো আহত কণ্ঠে সে বলে, আমার যে অসুখ গো ? অসুখ তা জানি, সেরে তো উঠেছ খানিকটা, ঠাকুরজামাইকে বলে কম-খাটুনির একটা কাজটাজ তুমি করতে পারবে। আমি আর কতকাল চালাব ? বাড়ির টাকা পেলে, বাড়িটা কার প্ল—শীতল বলে। বটে। তাই তবে শীতল মনে করিযাছে, তার বাড়িব টাকাব্য এতকাল চলিয়াছে আর তাহাব কিছু করিবার প্রয়োগ দেন নাই ? এতকাল সেই সংসার চালাইয়াছে, এই কথা ভাবিদ্যা বাখিয়াছে শীতল ? এবাব তাই তাহাব বসিযা থাকার অধিকার জন্মিয়াছে! এ সব জ্ঞান তো টনটনে আছে দেখি বেশ ?--- শ্যামা বলে। কুকুবটা উঠিযা যায়। শীতলেব দৃষ্টি তাঁহাকে অনুসরণ কবে। তারপর আবাব কতরকণ্ঠে সে বলে, আমাৰ অসুখ যে গো ? একদিনে হাল ছাডিবাব পাত্রী শ্যামা নয়। বারবার শীতলকে সে তাহদের অবস্থােটা বুঝাইবাব চেষ্টা কবে। কড়া কথা সে বলে না, লজ্জা দেয় না, অপমান করে না। আবার বাহির হইয়া ঘরে টাকা আনা শীতলের পক্ষে এখন কত কঠিন সে তা বোঝে, পাবুক না পারুক গা-ঝাড়া দিযা উঠিয়া শীতল একবার চেষ্টা করুক এইটুকু শুধু তার ইচ্ছা। বাখালকে শ্যামা একদিন বলিয়াছিল, ঠাকুরজামাই, আবার তো আমি নিবুপায় হলাম ? কেন ? আত টাকা কী করলে বউঠান ? তখনি বলেছিলাম টাকা তুমি রাখতে পারবে না— ঠাকুরজামাই, ছেলেকে আমার বি এ টা আপনি পাশ করিয়ে দিন। পড়ার খরচ দেবার কথা বলছি বউঠান ? হঁ্যা, রাখাল এবাব রাগ করি যাছিল। সে কি রাজা না জমিদার ? কতটাকা মাহিনা পায় সে শ্যামা জানে না ? এ কী অন্যান্য কথা যে শ্যামা ভুলিয়া যায় ক্ষমতার মানুষের একটা সীমা আছে, আজি কত বছর শ্যামা সকলকে লইয়া এখানে আছে, কত অসুবিধা হইয়াছে রাখালের, কত টানাটানি গিয়াছে তাহার কিন্তু কিছু সে বলে নাই, বলে নাই এই ভাবিয়া যে যতদিন ৩ার দুমুঠ ভাত জুটিবে শ্যামার ছেলেমেয়েকে একমুঠ তাকে দিতে হইবে, সেটা তার কর্তব্য। তাই কি শব্ণমা যথেষ্ট মনে করে না একটা ছাপোষা মানুষের পক্ষে ? ঠাকুরজামাই, একবছর আমিও তো কিছুকিছু সংসার খরচ দিয়েছি? বলিয়া শ্যামা সঙ্গে সঙ্গে অনুতাপ করে। অনুগ্রহ চাহিতে আসিয়া এমন কথা বলিতে আছে! মুখখানা তাহার শুকাইয়া যায়! রাখাল বলে, তা জানি বউঠান, আজ বলে নয় গোড়া থেকে জানি কৃতজ্ঞতা বলে তোমার কিছু নেই। যাক, আমার কর্তব্য আমি করেছি, নিন্দাপ্রশংসার কথা তো আর ভাবিনি, এখানে থাকতেও তোমাদের আমি বারণ করিনে, তার বেশি আমি কিছু পারব না বউঠান, আমায় মাপ করো---এই হাত জোড় করলাম তোমার কাছে।