বিপিনের পত্র পাঠ করিয়া রজনীকান্ত যে কিরূপ মনস্তাপ পাইলেন, তাহা ভ্রাতামাত্রেই সহজে অনুভব করিতে পারিবেন। অশিক্ষিতা রাজকিশোরীর চক্ষু দিয়াও জলধারা বহিল। কিন্তু উভয়ে পরামর্শ করিয়া পরিশেষে বিপিনের মতে মত দিলেন, এবং বিপিনের স্ত্রীকে বাড়ী আনাই স্থির করিলেন।
রজনীকান্ত বিপিনের সেই পত্রের উত্তর প্রদান করিলেন না; কিন্তু সময়ক্রমে রাজকিশোরী এক দিবস উহার ও স্বামীর মনের ভাব বিপিনের নিকট প্রকাশ করিলেন। বিপিন তাঁহাদিগের কথা শুনিয়া বিশেষরূপে সন্তুষ্ট হইলেন, এবং বর্তমান মাসের অবশিষ্ট কয়েক দিবস গত হইলেই, তিনি তাঁহার পত্নীকে আপন গৃহে আনয়ন করিবেন স্থির করিলেন।
ক্রমে মাসের অবশিষ্ট কয়েক দিবস গত হইয়া গেল। এক দিবস সন্ধ্যার সময় বিপিন তাঁহার পত্নীর সহিত আপন বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।
বিপিনের স্ত্রী বাড়ীতে পদার্পণ করিবামাত্রই তাঁহাকে দেখিয়া রজনীকান্ত ও রাজকিশোরী একেবারে আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া পড়িলেন। তাঁহারা ভাবিয়াছিলেন যে, বিপিনের স্ত্রী মানিনী নিতান্ত বালিকা হইবেন; নতুবা স্কুলে থাকিয়া এখনও পর্য্যন্ত লেখাপড়া শিখিতেছে কি প্রকারে? আরও ভাবিয়াছিলেন যে, কোন বন্ধুর অনুরোধ লঙ্ঘন করিতে না পারিয়া, তাঁহাদিগের অজ্ঞাতে বিপিন এই বিবাহ করিয়া ফেলিয়াছেন। কিন্তু যখন বিপিন তাঁহার স্ত্রীকে গাড়ী হইতে নামাইলেন, তখনই তাঁহাদিগের মস্তকে বজ্রাঘাত হইল। বিপিনের স্ত্রীকে ঘরে উঠাইবেন কি—মস্তকে হাত দিয়া তাঁহারা সেইস্থানে বসিয়া পড়িলেন।