পাতা:মানিনী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানিনী।
১৫

 রজনীকান্ত দেখিলেন যে, মানিনী বালিকা নহেন—যুবতী। বিপিন অপেক্ষা তাহার বয়স অধিক না হইলেও নিতান্ত কম হইবে না। তাহার পরিধানে একখানি শাটী থাকিলেও কেমন একরূপ করিয়া পরিধান করা। তাহার নিম্নে গলা হইতে লম্ববান্‌ একটী সাদা ঘাঘ্‌রা বা সেমিজ। পায়ে ফুল মোজা, তাহার উপর বুট জুতা। মাথার উপর একটী লেজ বাহির করা পাগ্‌ড়ী।

 এইরূপ অবস্থায় মানিনী গাড়ী হইতে নামিয়াই সম্মুখে রজনীকান্ত ও রাজকিশোরীকে দেখিতে পাইলেন। উহাদিগকে দেখিয়াই বিপিনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহাঁরা দুইজন কে?”

 উত্তরে বিপিন কহিলেন, “ইনি আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, আর ইনিই উহাঁর বনিতা।”

 বিপিনের কথা শুনিবামাত্র, মানিনী আপন দক্ষিণ হস্ত প্রসারণ করিয়া উহাঁদিগকে শেকহ্যাণ্ড করিবার মানসে প্রথমে রজনীকান্তের দিকে অগ্রসর হইলেন। রজনীকান্ত এই অশ্রুতপূর্ব্ব ব্যাপার দেখিয়া লজ্জায় অধোবদন হইয়া দ্রুতপদে বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়া গেলেন।

 অশিক্ষিতা রাজকিশোরী এরূপ হস্ত প্রসারণের উদ্দেশ্য কি, জানিতে না পারিয়া মানিনীর হাত ধরিয়া গৃহের ভিতর লইয়া গেলেন। সেই স্থানে একখানি চেয়ার পূর্ব্ব হইতে রক্ষিত ছিল। কাহাকেও কিছু না বলিয়া মানিনী তাহাতেই উপবেশন করিলেন।

 মানিনীর অবস্থা দেখিয়া রজনীকান্ত ভাবিলেন যে, বিপিনের মতে মত দিয়া তিনি কি সর্ব্বনাশই করিয়াছেন! এখন সমাজের লোক তাহাকে কি বলিবে?