এই কথা শ্রবণ করিয়াও বিপিন সেইস্থান হইতে তখনই প্রস্থান করিতে যেন একটু ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন। ইচ্ছা—মানিনীকে দুই একটী কথা জিজ্ঞাসা করেন; কিন্তু মানিনীর তাহা সহ্য হইল না। তাঁহার মুখের কথা কার্য্যে পরিণত করিল। লিখিতে লজ্জা হয়, সে প্রকৃতই বিপিনকে পদাঘাত করিল, এবং ভয়ানক চীৎকার করিয়া উঠিল। হঠাৎ পদাঘাতে বিপিন দূরে গিয়া পতিত হইলেন। সেই সময় মানিনীর ঘরে বসিয়া যাহারা আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত ছিল, তাহারা বহির্গত হইয়া পদাঘাতে পতিত সেই বিপিন ও তাঁহার বন্ধুকে নির্দ্দয়রূপে প্রহার করিতে করিতে বাটী হইতে বহির্গত করিয়া দিল। মানিনী সেইস্থানে দণ্ডায়মান হইয়া হাসিতে হাসিতে কহিতে লাগিল, “বেটাদের যেমন কর্ম্ম—তেমনি ফল।”
এই ঘটনার পর বিপিনকে কেমন কেমন বোধ হইতে লাগিল। তিনি আসিয়া আপনার ঘরে প্রবেশ করিলেন, সে ঘর হইতে আর বাহির হইলেন না। তিনি কোন স্থানে গমন করিতেন না, কোন লোকজনের সহিত সাক্ষাৎ করিতেন না; রাত্রিদিন নির্জ্জনে থাকিতেই ভালবাসিতেন।
কোন্ সময়ে যে অবস্থার কিরূপ পরিবর্ত্তন হয়, তাহা কেহই বলিতে পারেন না। এইরূপ কিছুদিবস অতিবাহিত হইবার পর সঙ্গে সঙ্গে রজনীকান্তের অবস্থার পরিবর্ত্তন হইতে লাগিল। বিনাদোষে সাহেব সন্দেহ করিয়া তাঁহাকে চাকরী হইতে জবাব দিল। অনন্যোপায় হইয়া রজনীকান্ত নানাস্থানে ঘুরিয়া চাকরীর যোগাড় করিতে লাগিলেন; কিন্তু এক বৎসরের মধ্যে কোন স্থানেই তিনি কোনরূপ চাকরীর যোগাড় করিয়া উঠিতে