পাতা:মানিনী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
88
দারােগার দপ্তর, ১৬১ সংখ্যা।

আসিল। মৃত্যুকালে বিপিন বলিয়াছিলেন, “এ দেশে কেহ যেন স্ত্রীকে শিক্ষিতা না করেন, বা শিক্ষিতা স্ত্রীলোকগণকে কেহ যেন আপনার হৃদয়ে স্থান প্রদান না করেন। পূর্ব্ব হইতে আমাদিগের যে প্রথা চলিয়া আসিতেছে, বৃদ্ধঋষিগণ নিঃস্বার্থভাবে যে প্রকার নীতি-পদ্ধতি প্রচলন করিয়া গিয়াছেন, কেহ যেন তাহার বিপর্য্যয় না করেন। স্বামী-সেবাই যাঁহাদিগের জীবনের প্রধান কার্য্য, গৃহের আবশ্যকীয় কার্য্যাদি লইয়া যাহাদিগের সর্ব্বদা ব্যস্ত থাকা আবশ্যক, তাঁহারা তাঁহাদিগের সেই সকল কর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া শিক্ষার প্রভায় অভিমানিনী হইলে, পরিশেষে তাঁহাদিগের যে কিরূপ শোচনীয় দশা হয়, আমার শিক্ষিতা স্ত্রীই তাহার জাজ্জ্বল্যমান্ প্রমাণ। শিক্ষিতার মায়ায় মুগ্ধ হইয়া যাঁহারা শিক্ষিতা স্ত্রীকে আপন হৃদয়ে স্থাপন করেন, তাঁহাদিগের দশা আমার মত হওয়াই উচিত।”

 মানিনীর নাম যশ, খ্যাতি প্রতিপত্তি, রূপ যৌবন, সমস্তই ফুরাইয়া গিয়াছে, সে অকালে বৃদ্ধত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে। আর কেহ তাহার অনুসন্ধান করে না। কেহ তাহাকে ফিরিয়াও দেখে না। সাধিয়া কথা কহিলেও তাহার সঙ্গে কেহ বাক্যালাপ করিতে ভালবাসে না। সুতরাং বাল্যে শিক্ষিতা, যৌবনে গণিকা-প্রধানা মানিনী এখন অতি হেয়, ঘৃণ্য, নগণ্য হইয়া পড়িয়াছে। জীবিত থাকিলেও সে এখন অস্তিত্বহীন হইয়া পড়িয়াছে। কেহ তাহার সন্ধান লয় না, সুতরাং আমরাও এখন তাহার কোন সন্ধান পাইলাম না।

 বিপিন অসময়ে ইহজীবন পরিত্যাগ করিলেন সত্য, কিন্তু রজনীকান্ত ও রাজকিশোরীকে অনেক দিবস বাঁচিতে হইয়াছিল। এখন তাঁহাদিগের অবস্থার পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজকিশোরীর