পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
মানুষের ধর্ম্ম

হয়ে ওঠে প্রধান, তখন চিন্তায় ব্যবহারে সাহিত্যে শিল্পকলায় পশুরক্তস্রোত আত্মস্থ করে সমাজ বেশি দিন বাঁচতেই পারে না। বিলাসোন্মত্ত রোম কি আপন ঐশ্বর্য্যের মধ্যেই পাকা ফলে কীটের মতো মরেনি? কালিদাস রঘুবংশের যে পতনের ছবি দিয়েচেন সে কি মানুষের জীবনে পশু প্রবেশের ফলেই না।

 অথর্ব্ববেদে শুধু কেবল সত্য ও ঋতের কথা নেই আছে রাষ্ট্রের কথাও। জনসংঘের শ্রেষ্ঠরূপ প্রকাশ করবার জন্যে তার রাষ্ট্র। ছোটো টবের বাইরে বনস্পতি যদি তার হাজার শিকড় মেলতে না পারে তাহলে সে বেঁটে হয়ে কাঠি হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের প্রশস্ত ভূমি না পেলে জনসমূহ পৌরুষবর্জ্জিত হয়ে থাকে। আপনার মধ্যে যে-ভূমাকে প্রমাণ করবার দায়িত্ব মানুষের, সমস্ত জাতি বৃহৎ জীবনযাত্রায় তার থেকে বঞ্চিত হোলে ইতিহাসে ধিক্কৃত হয়। সকলের মাঝখানে সকল কালের সম্মুখে উঠে দাঁড়িয়ে সে বলতে পারে না সোঽহম্‌, বলতে পারে না আমি আছি আমার মহিমায়, যে-আমি কেবল আজকের দিনের জন্যে নয়, যার আত্মঘোষণা ভাবী কালের তোরণে তোরণে ধ্বনিত হোতে থাকবে। ইতিহাসের সেই ধিক্কার বহুকালের সুপ্তিমগ্ন এসিয়া মহাদেশের বক্ষে দিয়েচে আজ আঘাত; সকল দিকেই শুনচি জনগণের অন্তর্যামী মহান পুরুষ তামসিকতার বন্দীশালায় শৃঙ্খলে