পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৯৫

অন্তরেই কাজ করচে অভিব্যক্তির প্রেরণা। সে ভূমার অভিব্যক্তি। জীবমানব কেবলি তার অহং আবরণ মোচন করে আপনাকে উপলব্ধি করতে চাচ্চে বিশ্বমানবে। বস্তুত সমস্ত পৃথিবীরই অভিব্যক্তি আপন সত্যকে খুঁজচে সেইখানে, এই বিশ্বপৃথিবীর চরম সত্য সেই মহামানবে। পৃথিবীর আরম্ভ কালের লক্ষ লক্ষ যুগের পরে মানুষের সূচনা। সেই সাংখ্যিক তথ্য মনে নিয়ে কালের ও আয়তনের পরিমাণে মানুষের ক্ষুদ্রতা বিচার করে কোনো কোনো পণ্ডিত অভিভূত হয়ে পড়েন। পরিমাণকে অপরিমেয় সত্যের চেয়ে বড়ো করা একটা মোহ মাত্র। যাকে আমরা জড় বলি সেই অব্যক্ত প্রাণ বহু কোটি কোটি বৎসর সুপ্ত ছিল। কিন্তু একটিমাত্র প্রাণকণা যে-দিন এই পৃথিবীতে দেখা দিল সেই দিনই জগতের অভিব্যক্তি তার একটি মহৎ অর্থে এসে পৌঁছল। জড়ের বাহ্যিক সত্তার মধ্যে দেখা দিল একটি আন্তরিক সত্য। প্রাণ আন্তরিক। যেহেতু সেই প্রাণকণা জড়পুঞ্জের তুলনায় দৃশ্যত অতি ক্ষুদ্র এবং যেহেতু সুদীর্ঘকালের একপ্রান্তে তার সদ্য জন্ম তাই তাকে হেয় করবে কে? মুকতার মধ্যে এই যে অর্থ অবারিত হোলো তার থেকে মানুষ বিরাট প্রাণের রূপ দেখলে বললে,

যদিদং কিঞ্চ সর্ব্বং প্রাণ এজতি নিঃসৃতম্‌।