পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
মানুষের ধর্ম্ম

যা-কিছু সমস্তই প্রাণ থেকে নিঃসৃত হয়ে প্রাণে কম্পিত হচ্চে। আমরা জড়কে তথ্যরূপে জানি কেননা সে যে বাইরের। কিন্তু প্রাণকে আমাদের অন্তর থেকে জানি সত্যরূপে। প্রাণের ক্রিয়া অন্তরে অন্তরে—তার সমস্তটাই গতি। তাই চলার একটি মাত্র ভাষা আমাদের কাছে অব্যবহিত, সে আমাদের প্রাণের ভাষা। চলা ব্যাপারকে অন্তর থেকে সত্য করে চিনেচি নিজেরই মধ্যে। বিশ্বে অবিশ্রাম চলার যে উদ্যম তাকে উত্তাপই বলি বিদ্যুৎই বলি সে কেবল একটা কথা মাত্র। যদি বলি এই চলার মধ্যে আছে প্রাণ তাহলে এমন কিছু বলা হয় আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে যার অর্থ আছে। সেই সঙ্গে এও বুঝি আমার প্রাণ যে চলচে সেও ঐ বিশ্বপ্রাণের চলার মধ্যেই। প্রাণগতির এই উদ্যম নিখিলে কোথাও নেই কেবল আকস্মিকভাবে আছে প্রাণীতে, এমন খাপছাড়া কথা আমাদের মন মানতে চায় না যে-মন সমগ্রতার ভূমিকায় সত্যকে শ্রদ্ধা জানায়।

 উপনিষদ বলেচেন,

কো হ্যেবান্যাৎ কঃ প্রাণ্যাৎ যদেষ আকাশ আনন্দোন স্যাৎ।

একটা কীটও প্রাণের ইচ্ছা করত কিসের জোরে যদি প্রাণের আনন্দ সমস্ত আকাশে না থাকত।