পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৯৭

দেশলাইয়ের মুখে একটি শিখা এক মুহূর্ত্তের জন্যেও জ্বলে কী করে যদি সমস্ত আকাশে তার সত্য ব্যাপ্ত না থাকে। প্রাণের মধ্যে সমস্ত সৃষ্টির একটি অন্তরতর অর্থ পাওয়া গেল—সেই অর্থকে বলি ইচ্ছা। জড় মূক হয়ে ছিল, এই ইচ্ছার ভাষা জানাতে পারেনি,—প্রাণ এসে ইচ্ছার বার্ত্তা প্রকাশ করলে। যে-বার্ত্তা গভীরে নিহিত ছিল তাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল।

 ছাত্র বহু দিন বহু প্রয়াসে অক্ষর শিখল, বানান শিখল, ব্যাকরণ শিখল, অনেক কাগজে অনেক আঁকা বাঁকা অসম্পূর্ণ নিরর্থক লেখা শিখল, উপকরণ ব্যবহার করল ও বর্জ্জন করল বিস্তর; অবশেষে কবিরূপে যে-মুহূর্ত্তে সে তার প্রথম কবিতাটি লিখতে পেরেচে সেই মুহূর্ত্তে ঐ একটি লেখায় এতদিনকার পুঞ্জ পুঞ্জ বাক্যহীন উপকরণের প্রথম অর্থটুকু দেখা দিল। জগতের বিপুল অভিব্যক্তিতে প্রথম অর্থ দেখলুম প্রাণকণায় তার পরে জন্তুতে, তারপরে মানুষে। বাহির থেকে অন্তরের দিকে একে একে মুক্তির দ্বার খুলে যেতে লাগল। মানুষে এসে যখন ঠেকল তখন যবনিকা উঠতেই জীবকে দেখলুম তার ভূমায়। দেখলুম রহস্যময় যোগের তত্ত্বকে পরম ঐক্যকে। মানুষ বলতে পারলে যাঁরা সত্যকে জানেন তারা

সর্ব্বমেবাবিশন্তি

সকলের মধ্যেই প্রবেশ করেন।