পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
মানুষের ধর্ম্ম

 এর দু-চার দিন পরেই লিখেচি ‘প্রভাত উৎসব’। একই কথা, আর একটু স্পষ্ট ক’রে লেখা—

“হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি’!
জগত আসি সেথা করিছে কোলাকুলি।
ধরায় আছে যত মানুষ শত শত,
আসিছে প্রাণে মোর হাসিছে গলাগলি।”

এই তো সমস্তই মানুষের হৃদয়ের তরঙ্গলীলা। মানুষের মধ্যে স্নেহ প্রেম ভক্তির যে সম্বন্ধ সেটা তো আছেই। তাকে বিশেষ ক’রে দেখা, বড় ভূমিকার মধ্যে দেখা, যার মধ্যে সে তার একটা ঐক্য, একটা তাৎপর্য্য লাভ করে। সেদিন যে-দু-জন মুটের কথা বলেচি, তাদের মধ্যে যে আনন্দ দেখলুম, সে সখ্যের আনন্দ, অর্থাৎ এমন-কিছু যার উৎস সর্ব্বজনীন সর্ব্বকালীন চিত্তের গভীরে। সেইটে দেখেই খুসি হয়েছিলুম। আরো খুসি হয়েছিলুম এই জন্যে যে, যাদের মধ্যে ঐ আনন্দটা দেখলুম, তাদের বরাবর চোখে পড়ে না, তাদের অকিঞ্চিৎকর ব’লেই দেখে এসেচি। যে-মুহূর্ত্তে তাদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ দেখলুম, অমনি পরম সৌন্দর্য্যকে অনুভব করলুম। মানব সম্বন্ধের যে বিচিত্র রসলীলা, আনন্দ, অনির্ব্বচনীয়তা, তা দেখলুম সেইদিন। সে দেখা বালকের কাঁচা লেখায় আকুবাঁকু ক’রে নিজেকে