পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
মানুষের ধর্ম্ম

সেও তাকে সার্থক করবার জন্যে প্রাণ দিতে পারে এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। অগোচর ভবিষ্যতেই নিজেকে সত্যতররূপে অনুভব করে বলেই তার প্রত্যক্ষ বর্ত্তমানকে বিসর্জ্জন দেওয়া সে ক্ষতি মনে করে না।

ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি,

পূর্ণ পুরুষের অধিকাংশ এখনো আছে অব্যক্ত। তাঁকেই ব্যক্ত করবার প্রত্যাশা নিয়ত চলেচে ভবিষ্যতের দিকে। পূর্ণ পুরুষ আগন্তুক। তাঁর রথ ধাবমান, কিন্তু তিনি এখনো এসে পৌঁছননি। বরযাত্রীরা আসচে, যুগের পর যুগ অপেক্ষা করচে, বরের বাজনা আসচে দূর থেকে। তাঁকে এগিয়ে নিয়ে আসবার জন্যে দূতেরা চলেচে দুর্গম পথে। এই যে অনিশ্চিত আগামীর দিকে মানুষের এত প্রাণপণ আগ্রহ, এই যে অনিশ্চিতের মধ্যে অনাগতের মধ্যে তার চিরনিশ্চিতের সন্ধান অক্লান্ত, তারই সঙ্কটসঙ্কুল পথে মানুষ বারবার বাধা পেয়ে ব্যর্থ হয়েও যাত্রা বন্ধ করতে পারলে না। এই অধ্যবসায়কে বলা যেতে পারত পাগলামি কিন্তু মানুষ তাকেই বলেচে মহত্ত্ব। এই মহত্ত্বের আশ্রয় কোথায়? অলক্ষ্য একটা পরিপূর্ণতার দিকে মানুষের মনের আকর্ষণ দেখতে পাই; অন্ধকার ঘরের গাছে তার শাখায় প্রশাখায় যেমন একটা স্বাভাবিক ব্যাকুলতা প্রাচীরের ও-পারের আলোকের