পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
১৯

দিকে। আলোক যেমন সত্য, পূর্ণের আকর্ষণ নিয়ত যেখান থেকে প্রেরিত সেও যদি তেমনি সত্য না হোত তাহলে জীবিকার প্রয়োজনের বাইরে আত্মার উৎকর্ষের জন্যে মানুষ যা কিছু চিন্তা করে কর্ম্ম করে তার কোনো অর্থই থাকে না। এই সত্যকে ক্ষণে ক্ষণে স্পর্শ করি আমাদের সঙ্কল্পে, আমাদের ধ্যানে, আমাদের আদর্শে। সেই অভাবনীয় পূর্ণকে দেখতে পাই দুঃখের দীপ্তিতে, মৃত্যুর গৌরবে। সে আমাদের জ্ঞানকে ঘরছাড়া করে বড়ো ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়েচে, নইলে পরমাণুতত্ত্বের চেয়ে পাকপ্রণালী মানুষের কাছে অধিক আদর পেত। সীমাবদ্ধ সৃষ্টিকে মানুষ প্রত্যক্ষ দেখচে, তাকে ব্যবহার করচে কিন্তু তার মন বলচে এই সমস্তেরই সত্য রয়েচে সীমার অতীতে। এই সীমাকে যদি প্রশ্ন করি তার শেষ উত্তর পাইনে এই সীমার মধ্যেই।

ছান্দোগ্য উপনিষদে কথিত আছে, ক্ষত্রিয় রাজা প্রবাহণের সামনে দুই ব্রাহ্মণ তর্ক তুলেছিলেন, সামগানের মধ্যে যে-রহস্য আছে তার প্রতিষ্ঠা কোথায়?

দাল্‌ভ্য বললেন, “এই পৃথিবীতেই।” স্থূল প্রত্যক্ষই সমস্ত রহস্যের চরম আশ্রয় বোধ করি দাল্‌ভ্যের এই ছিল মত।

প্রবাহণ বললেন, “তাহলে তোমার সত্য তো অন্তবান হোলো, সীমায় এসে ঠেকে গেল যে।”