পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
২৭

ভাবে বাস করে, মার খেলে সে রেগে আগুন হয়ে ওঠে। এই রকম সব উত্তরে মানুষের পুরাণ বোঝাইকরা। যাদের শিশুবুদ্ধি কিছুতেই বাড়তে চায় না তারা এই রকম উত্তরকে আঁকড়ে ধরে থাকে। কিন্তু অল্পে-সন্তুষ্ট মূঢ়তার মাঝখানেও মানুষের প্রশ্ন বাধা ঠেলে ঠেলে চলে। কাজেই উনুন ধরাবার জন্যে আগুন জ্বালতে মানুষকে যত চেষ্টা করতে হয়েচে তার চেয়ে সে কম চেষ্টা করেনি আগুন জ্বলে কেন তার অনাবশ্যক উত্তর বের করতে। এদিকে হয়ত উনুনের আগুন গেছে নিবে, হাঁড়ি চড়েনি, পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলচে, প্রশ্ন চলচেই আগুন জ্বলে কেন? সাক্ষাৎ আগুনের মধ্যে তার উত্তর নেই, উত্তর আছে প্রত্যক্ষ আগুনকে বহুদূরে ছাড়িয়ে। জন্তু-বিচারক মানুষকে কি নির্ব্বোধ বলবে না, আমরা পতঙ্গকে যেমন বলি মূঢ়, বারবার যে-পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে?

এই অদ্ভুত বুদ্ধির সকলের চেয়ে স্পর্দ্ধা প্রকাশ পায় যখন মানুষকে সে ঠেলা দিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে তুমি আপনি কে। এমন কথা বলতেও তার বাধে না যে মনে হচ্চে বটে তুমি আছ কিন্তু সত্যই তুমি আছ কি, তুমি আছ কোথায়। উপস্থিত মতো কোনো জবাব না খুঁজে পেয়ে তাড়াতাড়ি যদি বলে বসি, আছি দেহধর্ম্মে, অমনি অন্তর থেকে প্রবাহণ রাজা মাথা নেড়ে