পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
মানুষের ধর্ম্ম

প্রাণীর নিজেকে রক্ষা, আর এ পথে আত্মবানের আত্মাকে রক্ষা নয় আত্মাকে প্রকাশ।

বৈদিক ভাষায় ঈশ্বরকে বলেচে আবিঃ, প্রকাশস্বরূপ। তাঁর সম্বন্ধে বলেচে, যস্য নাম মহদ্‌যশঃ তাঁর মহদ্‌ যশই তাঁর নাম, তাঁর মহৎ কীর্ত্তিতেই তিনি সত্য। মানুষের স্বভাবও তাই,—আত্মাকে প্রকাশ। বাইরে থেকে খাদ্যবস্তু গ্রহণ করার দ্বারাই প্রাণী আপনাকে রক্ষা করে, বাইরে আপনাকে উৎসর্গ করার দ্বারাই আত্মা আপনাকে প্রকাশ করে। এইখানে প্রকৃতিকে ছাড়িয়ে গিয়ে সে আপনাকে ঘোষণা করে। এমন কি, বর্ব্বর দেশের মানুষও নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টায় প্রকৃতিকে লঙ্ঘন করতে চায়। সে নাক ফুঁড়ে মস্ত এক শলা দিয়েচে চালিয়ে। উখো দিয়ে দাঁত ঘষে ঘষে ছুঁচোলো করেচে। শিশুকালে তক্তা দিয়ে চেপে বিকৃত করেচে মাথার খুলি, বানিয়েচে বিকটাকার বেশভূষা। এই সব উৎকট সাজে সজ্জায় অসহ্য কষ্ট মেনেচে। বলতে চেয়েচে সে নিজে সহজে যা তার চেয়ে সে বড়ো। সেই তার বড়ো-আমি প্রকৃতির বিপরীত। যে-দেবতাকে সে আপন আদর্শ বলে মানে সেও এমনি অদ্ভুত, তার মহিমার প্রধান পরিচয় এই যে সে অপ্রাকৃতিক। প্রকৃতির হাতে পালিত তবু প্রকৃতিকে দুয়ো দেবার জন্যে মানুষের এই যেন একটা ঝগড়াটে