পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৫১

ঐক্য তো দেখিনে। তাহলে সেটা যে নৈর্ব্যক্তিক শাশ্বত সত্যে প্রতিষ্ঠিত এ কথা বলা যায় কী ক’রে।

 জ্যোতির্ব্বিদ দূরবীন নিয়ে জ্যোতিষ্কের পর্য্যালোচনা করতে চান, কিন্তু তার বাধা বিস্তর। আকাশে আছে পৃথিবীর ধূলো, বাতাসের আবরণ, বাষ্পের অবগুণ্ঠন, চার দিকে নানা প্রকার চঞ্চলতা। যন্ত্রের ক্রটিও অসম্ভব নয়, যে-মন দেখচে তার মধ্যে আছে পূর্ব্বসংস্কারের আবিলতা। ভিতর-বাহিরের সমস্ত ব্যাঘাত নিরস্ত করলে বিশুদ্ধ সত্য পাওয়া যায়। সেই বিশুদ্ধ সত্য এক, কিন্তু বাধাগ্রস্ত প্রতীতির বিশেষত্ব অনুসারে ভ্রান্ত মত বহু।

 পুরোনো সভ্যতার মাটিচাপা ভাঙাচোরা চিহ্নশেষ উদ্ধার করলে তার মধ্যে দেখা যায় আপন শ্রেষ্ঠতাকে প্রকাশ করবার জন্যে মানুষের প্রভূত প্রয়াস। নিজের মধ্যে যে-কল্পনাকে সকল কালের সকল মানুষের ব’লে সে অনুভব করেচে তারি দ্বারা সর্ব্বকালের কাছে নিজের পরিচয় দিতে তার কত বল, কত কৌশল। ছবিতে মূর্ত্তিতে, ঘরে ব্যবহারের সামগ্রীতে সে ব্যক্তিগত মানুষের খেয়ালকে প্রচার করতে চায়নি, বিশ্বগত মানুষের আনন্দকে স্থায়ী রূপ দেবার জন্যে তার দুঃসাধ্য সাধনা। মানুষ তাকেই জানে শ্রেষ্ঠতা যাকে সকল কাল ও সকল মানুষ স্বীকার করতে পারে। সেই