পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৫৭

চরিত্রবিকৃতি বা হিংস্রতা দেখে অবজ্ঞা প্রকাশ করেন। সংস্কারবশত দেখতে পান না মানুষের আপন অহিতবুদ্ধি তাঁদেরও দেবতার ধারণাকে কীরকম নিদারুণভাবে অধিকার করতে পারে। অপ্সুদীক্ষা বা ব্যাপ্টিজ্‌ম্‌ হবার পূর্ব্বে কোনো শিশুর মৃত্যু হোলে যে-সাম্প্রদায়িক শাস্ত্রমতে তার অনন্ত নরকবাস বিহিত হতে পারে সেই শাস্ত্রমতে দেবচরিত্রে যে অপরিসীম নির্দ্দয়তার আরোপ করা হয় তার তুলনা কোথায় আছে। বস্তুত যে-কোনো পাপের প্রসঙ্গেই হোক অনন্ত নরকের কল্পনা হিংস্রবুদ্ধির চরম প্রকাশ। য়ুরোপে মধ্যযুগে শাস্ত্রগত ধর্ম্মবিশ্বাসকে অবিচলিত রাখবার জন্যে যে-বিজ্ঞানবিদ্বেষী ও ধর্ম্মবিরুদ্ধ উৎপীড়ন আচরিত, তার ভিত্তি এইখানে। সেই নরকের আদর্শ সভ্যমানুষের জেলখানায় আজো বিভীষিকা বিস্তার ক’রে আছে। সেখানে শোধন করবার নীতি নেই, আছে শাসন করবার হিংস্রতা।

 মনুষ্যত্বের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দেবতার উপলব্ধি মোহমুক্ত হতে থাকে, অন্তত হওয়া উচিত। হয় না যে তার কারণ ধর্ম্মসম্বন্ধীয় সব কিছুকেই আমরা নিত্য ব’লে ধরে নিয়েচি। ভুলে যাই যে, ধর্ম্মের নিত্য আদর্শকে শ্রদ্ধা করি ব’লেই ধর্ম্মমতকেও নিত্য ব’লে স্বীকার করতে হবে এমন কথা বলা চলে না। ভৌতিক বিজ্ঞানের মূলে নিত্য সত্য আছে ব’লেই বৈজ্ঞানিক মত মাত্রই নিত্য