পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
মানুষের ধর্ম্ম

চূড়ান্তভাবেই দেখা দিয়েচে। এরোপ্লেন থেকে বোমাবর্ষণে দেখা যায় মানুষের শক্তির আশ্চর্য্য সমৃদ্ধি, ভূতল থেকে নভস্তল পর্য্যন্ত তার সশস্ত্র বাহুর বিপুল বিস্তার। আবার হননে প্রবৃত্ত শত্রুকে ক্ষমা ক’রে তাকে রক্ষা করতে পারল মানুষের এই আর এক পরিচয়। শত্রু-হননের সহজ প্রবৃত্তি মানুষের জীবধর্ম্মে, তাকে উত্তীর্ণ হয়ে মানুষ অদ্ভুত কথা বললে, শত্রুকে ক্ষমা করো। এ কথাটা জীবধর্ম্মের হানিকর কিন্তু মানবধর্ম্মের উৎকর্ষলক্ষণ।

 আমাদের ধর্ম্মশাস্ত্রে বলে, যুদ্ধকালে যে-মানুষ রথে নেই যে আছে ভূতলে, রথী তাকে মারবে না। যে ক্লীব, যে কৃতাঞ্জলি, যে মুক্তকেশ, যে আসীন, যে সানুনয়ে বলে আমি তোমারি তাকেও মারবে না। যে ঘুমচ্চে, যে বর্ম্মহীন, যে নগ্ন, যে নিরস্ত্র, যে অযুধ্যমান, যে যুদ্ধ দেখচে মাত্র, যে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত তাকেও মারবে না। যার অস্ত্র গেছে ভেঙে, যে শোকার্ত্ত, যে পরিক্ষত, যে ভীত, যে পরাবৃত্ত, সতের ধর্ম্ম অনুস্মরণ ক’রে তাকেও মারবে না।

 সতের ধর্ম্ম বলতে বোঝায় মানুষের মধ্যে যে সত্য তারই ধর্ম্ম, মানুষের মধ্যে যে মহৎ, তাঁরই ধর্ম্ম। যুদ্ধ করতে গিয়ে মানুষ যদি তাঁকে অস্বীকার করে তবে ছোটো দিকে তার জিৎ হোলেও বড়ো দিকে তার হার।