পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৬৫

উপকরণের দিকে তার সিদ্ধি, অমৃতের দিকে সে বঞ্চিত, এই অমৃতের আদর্শ মাপজোখের বাইরে।

 স্বর্ণলঙ্কার মাপজোখ চলে। দশাননের মুণ্ড ও হাত গণনা ক’রে বিস্মিত হবার কথা। তার অক্ষৌহিণী সেনারও সংখ্যা আছে, জয়বিস্তারের পরিধি-দ্বারা সেই সেনার শক্তিও পরিমেয়। আত্মার মহিমার পরিমাণ নেই। শত্রুকে নিধনের পরিমাপ আছে শত্রুকে ক্ষমার পরিমাপ নেই। আত্মা যে-মহার্ঘ্যতায় আপন পরিচয় দেয় ও পরিচয় পায় সেই পরিচয়ের সত্য কি বিরাজ করে না অপরিমেয়ের মধ্যে, যাকে অথর্ব্ববেদ বলেচেন সকল সীমার উদ্বৃত্ত, সকল শেষের উৎশেষ। সে কি এমন একটি স্বয়ম্ভুব বুদ্বুদ কোনো সমুদ্রের সঙ্গে যার কোনো যোগ নেই। মানুষের কাছে শুনেচি, ন পাপে প্রতিপাপঃ স্যাৎ—তোমার প্রতি পাপ যে করে তার প্রতি ফিরে পাপ কোরো না। কথাটাকে ব্যবহারে ব্যক্তিবিশেষ মানে বা নাই মানে তবু মন তাকে পাগলের প্রলাপ ব’লে হেসে ওঠে না। মানুষের জীবনে এর স্বীকৃতি দৈবাৎ দেখি, প্রায় দেখি বিরুদ্ধতা, অর্থাৎ মাথা গণ্‌তি ক’রে এর সত্য চোখে পড়ে না বললেই হয়। তবে এর সত্যতা কোন্‌খানে। মানুষের যে স্বভাবে এটা আছে তার আশ্রয় কোথায়। মানুষ এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েচে শুনি।