পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
মানুষের ধর্ম্ম

এবং তাই নিয়ে তারা মারকাট করতে ছোটে। স্বীকার করি কাঠ পাথর বাইরের জিনিষ, সেখানে সর্ব্বকালের সর্ব্বমানুষের পূজা মিলতে পারে না। মানুষের ভক্তিকে জাতিতে জাতিতে প্রথায় প্রথায় সেই পূজা বিচ্ছিন্ন করে, তার ঐতিহাসিক গণ্ডীগুলি সঙ্কীর্ণ।

 কিন্তু তাদের বিরুদ্ধ সম্প্রদায়েরও দেবতা প্রতিমার মতোই বাইরে অবস্থিত, নানা প্রকার অমানুষিক বিশেষণে লক্ষণে সজ্জিত, শুধু তাই নয়, বিশেষ জাতির ঐতিহাসিক কার্য্যকলাপে জড়িত ও কাল্পনিক কাহিনী-দ্বারা দৈশিক ও কালিক বিশেষত্বগ্রস্ত। এই পৌত্তলিকতা সূক্ষ্মতর উপাদানে রচিত ব’লেই নিজেকে অপৌত্তলিক ব’লে গর্ব্ব করে। বৃহদারণ্যক এই বাহ্যিকতাকেও হীন ব’লে নিন্দা করেচেন। তিনি বলেন যে-দেবতাকে আমার থেকে পৃথক ক’রে বাইরে স্থাপন করি তাঁকে স্বীকার করার দ্বারাই নিজেকে নিজের সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দিই।

 এমনতরো কথায় একটা ক্রুদ্ধ কলরব উঠতে পারে। তবে কি মানুষ নিজেকে নিজেই পূজা করবে। নিজেকে ভক্তি করা কি সম্ভব। তাহলে পূজা ব্যাপারকে তো বলতে হবে অহঙ্কারের বিপুলীকরণ।

 একেবারে উল্‌টো। অহংকে নিয়েই অহংকার। সে তো পশুও করে। অহং থেকে বিযুক্ত আত্মায় ভূমার উপলব্ধি একমাত্র মানুষের পক্ষেই সাধ্য।