পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৭৯

বন্ধন, সকল আমির কর্ম্ম মুক্তি। আমাদের বাংলা দেশের বাউল বলেচে—

মনের মানুষ মনের মাঝে করো অন্বেষণ
একবার দিব্যচক্ষু খুলে গেলে দেখতে পাবি সর্ব্বঠাঁই।

 সেই মনের মানুষ সকল মনের মানুষ, আপন মনের মধ্যে তাঁকে দেখতে পেলে সকলের মধ্যেই তাঁকে পাওয়া হয়। এই কথাই উপনিষদ বলেচেন,

যুক্তাত্মানঃ সর্ব্বমেবাবিশন্তি।

 বলেচেন,

তং বেদ্যং পুরুষং বেদ

—যিনি বেদনীয় সেই পূর্ণ মানুষকে জানো, অন্তরে আপনার বেদনায় যাঁকে জানা যায় তাঁকে সেই বেদনায় জানো, জ্ঞানে নয়, বাইরে নয়।

 আমাদের শাস্ত্রে সোঽহম্‌ ব’লে যে তত্ত্বকে স্বীকার করা হয়েচে তা যত বড়ো অহঙ্কারের মতো শুনতে হয় আসলে তা নয়। এতে ছোটোকে বড়ো বলা হয়নি, এতে সত্যকে ব্যাপক বলা হয়েচে। আমার যে ব্যক্তিগত আমি তাকে ব্যাপ্ত করে আছে বিশ্বগত আমি। মাথায় জটা ধারণ করলে গায়ে ছাই মাখলে বা মুখে এই শব্দ উচ্চারণ করলেই সোঽহম্‌-সত্যকে প্রকাশ করা হোলো এমন কথা যে মনে করে সেই অহঙ্কৃত। যে-আমি সকলের, সেই আমিই আমারও, এটা সত্য,