পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৮৩

তাকে সত্য নাম দিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে থাকে,—মিল নেই বলেই এই নিয়ে তাদের উত্তেজনা উগ্রতা এত বেশি। রাগারাগির দ্বারা সত্যের প্রতিবাদ, অগ্নিশিখাকে ছুরি দিয়ে বেঁধবার চেষ্টার মতো। সেই ছুরি সত্যকে মারতে পারে না, মারে মানুষকে। তবু সেই বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়েই বলতে হবে,

সব সাঁচ মিলৈ সো সাঁচ হৈ
না মিলৈ সো ঝূঁঠ।

 একদা যে-দিন কোনো একজন মাত্র বৈজ্ঞানিক বললেন, পৃথিবী সূর্য্যের চার দিকে ঘুরচে সে-দিন সেই একজন মাত্র মানুষই বিশ্বমানুষের বুদ্ধিকে প্রকাশ করেচেন। সে-দিন লক্ষ লক্ষ লোক সে কথায় ক্রুদ্ধ, তারা ভয় দেখিয়ে জোর করে বলাতে চেয়েচে সূর্য্যই পৃথিবীর চার দিকে ঘুরচে; তাদের সংখ্যা যতই বেশি হোক, তাদের গায়ের জোর যতই থাক, তবু তারা প্রজ্ঞাকে অস্বীকার করবামাত্র চিরকালের মানবকে অস্বীকার করলে। সে-দিন অসংখ্য বিরুদ্ধবাদীর মাঝখানে একলা দাঁড়িয়ে কে বলতে পেরেচে সোঽহং অর্থাৎ আমার জ্ঞান আর মানবভূমার জ্ঞান এক, তিনিই বলেচেন যাঁকে সে-দিন বিপুল জনসংঘ সত্য প্রত্যাখ্যান করাবার জন্যে প্রাণান্তিক পীড়ন করেছিল।