পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 গির্জার বাগানে এসে থামলো। চার-পাঁচশো লোকের ভিড়। ছেলে মেয়ে, বুড়ো ছুটোছুটি করছে চারদিকে প্রজাপতির মতো আনন্দে। জনসমুদ্র দুলছে একবার এদিকে, একবার ওদিকে। ভিড়ের মধ্যে শিজভের গলা,··· না, আমাদের ছেলেদের আমরা ত্যাগ করবনা। জ্ঞানে ওরা আমাদের শ্রেষ্ঠ, সাহসে ওরা আমাদের শ্রেষ্ঠ। জলাভূমির জন্য অন্যায় কর হ’তে কারা আমাদের রক্ষা করেছে?—ওরা! কথাটা ভুললে চলবে না। এ ক’রে ওরা জেলে গেছে, কিন্তু সুফল ভোগ করছি আমরা—আমরা সকলে।···

 বাঁশি বেজে উঠলো, জনতার কলরবকে ডুবিয়ে দিয়ে। সবাই চম্‌কে উঠলো। যারা ব’সে ছিল, উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এক মুহূর্ত— সব মৃত্যুর মতো নীরব, নিথর। সবারই সতর্ক দৃষ্টি, মলিন-মুখ। তার মধ্যে আচম্‌কা ধ্বনিত হ’ল পেভেলের দৃঢ় কণ্ঠ, বন্ধুগণ!···

 মা’র চোখের সামনে জ্বলে উঠলো যেন আগুনের দীপ্তশিখা···সমগ্র শক্তি প্রয়োগ ক’রে তিনি নিজের দেহটা পেভেলের পেছনে এনে দাঁড় করালেন। সকলের দৃষ্টি ফিরলো পেভেলের দিকে···চুম্বক যেন টানছে লৌহ-শলাকাকে।

 বন্ধুগণ! ভাইগণ! আজ লগ্ন উপস্থিত···আজ বর্জন করতে হবে আমাদের এই জীবন, এই লোভ, ঈর্ষা, অন্ধকারের জীবন, এই হিংসা মিথ্যা অপবিত্র জীবন,···এই জীবন—যেখানে আমাদের কোন স্থান নেই, যেখানে আমরা মানুষ ব’লে পরিগণিত নই।···

 পেভেল থামলো, জনতা নিঃশব্দে তার দিকে আরো চেপে দাঁড়ালো। মা ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন···কী গর্বপূর্ণ সাহস-দীপ্ত জ্বলন্ত ছেলের চোখ!

১১২