পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

সঙিন উঁচিয়ে মার্চ করে আসছে— শান্তভাবে। খানিক-দূর এসে তার স্থির হয়ে দাঁড়ালো। মা ছেলের দিকে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন এণ্ড্রি পেভেলের আগে গিয়ে নিজের দীর্ঘ দেহ দিয়ে তাকে আগলে রেখেছে, আর পেভেল তীক্ষ্ণকণ্ঠে চেঁচাচ্ছে—সামনে থেকে স’রে দাঁড়াও। এণ্ড্রি মাথা উঁচু ক’রে মহোৎসাহে গান গাইছে, পেভেল তাকে ঠেলা দিয়ে বলছে, পাশে যাও, নিশান সামনে থাক্।

 ‘ভাগো’ ব’লে একজন সামরিক কর্মচারী সজোরে ভূমিতে পদাঘাত ক’রে চক্‌চকে একখানা তলোয়ার খেলাতে লাগলো। তার পেছনে আবার আরও একজন কর্মচারী।

 মা যেন শূন্যের দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রতি মুহূর্তে তাঁর বুক ফেটে যাবার উপক্রম হ’ল। দু’হাতে বুক চেপে তিনি এগোতে লাগলেন —জ্ঞানশূন্য, চিন্তাশূন্য। পেছনে জনতা পাতলা হয়ে যাচ্ছে— শীতল বাতাহত পত্রের মতো তারা ঝ’ড়ে পড়ছে দল থেকে।

 লাল-নিশানের চারদিকে মজুররা আরও ঘেঁসাঘেঁসি হ’য়ে দাড়ালো। সৈনিকেরা সঙিন দিয়ে তাদের তাড়া করতে লাগলো। মা শুনলেন, পেছনে পলাতকদের শঙ্কিত পদশব্দ আর কণ্ঠস্বর—

 পালাও, পালাও—

 দৌড়ে যাও, মা—

 পিছিয়ে এসো, পেভেল।

 নিশান ছাড়ো পেভেল, আমায় দাও, আমি লুকিয়ে রাখছি—ব’লে নিকোলাই নিশানটা ধরলো। বারেকের জন্য নিশান পেছনে হেলে পড়লো। পেভেল বজ্রকণ্ঠে বলে উঠলো, ছাড়ো নিশান।

 নিকোলাই হাত টেনে নিলো, যেন হাত তার আগুনে পুড়ে গেছে।

১২০