দেখছি না,ঘুমোচ্ছে বোধ হয়। ওদের তো মেহনৎ কম নয়, আমাদের মতে। ওদেরও জীবন, বিপদসংকুল!···
মা তার কাহিনী শুনে প্রাণ খুলে হাসেন। শোফির দীর্ঘ উন্নত দেহ, গভীর কালো চোখ দিয়ে ফুটে বেরোয় একটা দীপ্তি, একটা সাহস, একটা অনাবিল আনন্দ। পাখির গান শুনতে শুনতে, পথের ফুল তুলতে তুলতে, নৈসর্গিক দৃশ্যের ওপর মুগ্ধ-দৃষ্টি বুলোতে বুলোতে দু’জন গ্রামের দিকে এগিয়ে চললো। শোফির আনন্দোজ্জ্বল মুর্তিখানির দিকে চেয়ে মা বললেন, তুমি এখনো তরুণ!
শোফি হাসতে হাসতে বললো, আমার বয়স, মা, বত্রিশ বছর।
মা বললেন হোক, কিন্তু তোমার চোখ, তোমার কণ্ঠ এতো সজীব যে তোমাকে তরুণী বলে মনে হয়। এতো বিপদসংকুল জীবন তোমার অথচ প্রাণ তোমার হাসছে।
শোফি বললো, প্রাণ আমার হাসছে, চমৎকার বলেছো, মা, কিন্তু কষ্ট! কই, না তো! আমিতো মনে করি, এর চেয়ে সুন্দর, এর চেয়ে মজাব জীবন আর হ’তে পারে না!
মা বললেন, সব চেয়ে তোমাদের এই জিনিসটা আমার ভালো লাগে। তোমরা জান, মানুষের প্রাণে ঢুকতে হয় কোন্ পথ দিয়ে। নির্ভয়ে, নির্ভাবনায় মানব-প্রাণের সমস্ত কিছু তোমাদের সামনে খুলে যায়। পৃথিবীতে অন্যায়কে তোমরা জয় করেছো, সম্পূর্ণভাবে জয় করেছো।
শোফি জোর দিয়ে বললো, হাঁ, মা, আমরা জয়ী হব; কারণ আমরা মজুরদের সঙ্গে এক হ’য়ে দাঁড়িয়েছি। তাদের কাছ থেকেই আমরা পাই আমাদের কর্মশক্তি—সত্য যে জয়যুক্ত হবে এই স্থিরবিশ্বাস। তারাই হচ্ছে আমাদের সমস্ত দৈহিক এবং অলৌকিক শক্তির অফুরন্ত উৎস।
১৩৬