পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 কিন্তু তার মাছ ধরাও হয়ে উঠলােনা, শিকার করাও হয়ে উঠলাে না।

 ধীরে ধীরে সে সকলের চলা-পথ ত্যাগ ক’রে অন্য এক পথে এসে দাঁড়ালাে। মজলিসে যাওয়া তার ক্রমশ কমে এলাে। ছুটির দিন যদিও সে কোথাও বেরিয়ে যায়, কিন্তু আর কখনাে মাতাল হ’য়ে বাড়ি ফেরে না। মা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লক্ষ্য করেন, ছেলের চোখ-মুখ যেন কি একটা অনুপ্রেরণায় ক্রমশ গম্ভীর, কঠিন, তীক্ষ্ণ হ’য়ে ওঠে···যেন সবসময়ই তার মন জ্বলছে কোনাে-কিছুর ওপর ক্রোধে···অথবা যেন একটা গােপন ক্ষত অহর্নিশ তাকে খোঁচাচ্ছে। বন্ধুরা আসতাে প্রথম প্রথম···কিন্তু কোনদিন তাকে বাড়ি না পেয়ে আসা ছেড়ে দিলাে। মা ছেলের এই স্বাতন্ত্র্য দেখে খুশিও হলেন, শঙ্কিতও হলেন। ছেলে এদিকেও টল্‌ছে না, ওদিকেও টল্‌ছে না···রুটিন-বাঁধা জীবনও তার নয়···সে চলেছে দৃঢ় নিষ্ঠায়, অটুট সংকল্পে কোন এক গােপন পথে···তাই মায়ের শঙ্কা।

 বাড়িতে সে বই নিয়ে আস্‌তে লাগলাে। প্রথম প্রথম সে লুকিয়ে পড়তাে, পড়ে’ লুকিয়ে রাখতে···মাঝে মাঝে বই থেকে অংশবিশেষ কাগজে নকল ক’রে কাগজখানাও লুকিয়ে ফেলতাে। মা-ছেলেতে কথাবার্তা বড় একটা হত না। দিনের কাজের শেষে সন্ধ্যায় হাত-মুখ-ধু’য়ে খাওয়া শেষ করে ছেলে বই নিয়ে বসতো, অনেক রাত পর্যন্ত পড়া চলতাে। ছুটির দিনে ভােরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতাে, ফিরতো অনেক রাতে। তার ভাষা মার্জিত হ’তে লাগলাে, মা তার মুখে নতুন অজানা শব্দ শুনে অবাক হ’য়ে যেতেন। মায়ের শঙ্কা বাড়তাে। ছেলে বই আনে, ছবি আনে, ঘর সাজায়, ফিটফাট হ’য়ে থাকে। মাতলামি নেই, গালাগালি নেই। ছেলে কি সন্ন্যাসী হল?···খুব সম্ভব শহরের কোনাে মেয়ের প্রেমে পড়েছে। তাই বা কি ক’রে হ’বে? তাতে

১৮