পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

তার শবটাকে যখন ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়, তখন?—তখন কি বুঝতে হ’বে? হত্যার অর্থ বুঝি, কিন্তু এই নির্যাতন, এর মানে বুঝতে পারিনে। আমাদের ওপর ওদের এ নির্যাতন···ওরা কেন করে জানো?— করে দুনিয়ার আমোদ-উৎসব, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সব আত্মসাৎ করবে বলে— করে যাতে মানুষের রক্ত দিয়ে ওরা সব-কিছু কিনতে পারে—সুন্দরী গণিকা, ব্যার্মিজ টাট্টু, চাঁদির ছুরি, সোনার থালা, ছেলেমেয়ের খেলনা। তোরা কাজ কর, কাজ কর, আরো কাজ কর, কেবল কাজ কর, আর আমরা? আমরা তোমাদের মেহনতের কড়ি জমাই, আমাদের প্রণয়িনীকে সোনার পাত্র কিনে এনে দিই।···

 সেভ্‌লি বললো, আমি চাই তোমরা এর প্রতিশোধ গ্রহণ কর। এই রিক্ত-সর্বস্ব জনগণের ওপর অনুষ্ঠিত অন্যায়ের প্রতিশোধ নাও।

 রাইবিন বললো, রোজ ও আমাদের এই কথা শোনাবে।

 মা ব’লে উঠলেন, আর কি শুনতে চাও তোমরা? হাজার হাজার মানুষ যেখানে দিনের পর দিন কাজ ক’রে মরছে, আর মুনিব তাদের মেহনতের কড়ি দিয়ে মজা লুঠছে, সেখানে আর কি শুনতে চাও তোমরা?

 শোফি তখন দেশ-বিদেশের মজুর-প্রগতির কথা জ্বলন্ত ভাষায় বর্ণনা করে গেলো, তারপর বললো, দিন আসছে, যেদিন সারা দুনিয়ার মজুরেরা মাথা তুলে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করবে, এ জীবন আর চাইনে আমরা। এ জীবনের এইখানেই পরিসমাপ্তি হোক। সেদিন লুব্ধ ধনীর কাল্পনিক শক্তি তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়বে, তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, তাদের অবলম্বন অন্তর্হিত হ’বে।

 রাইবিন বললো, আর তার জন্য চাই একটা জিনিস—নিজেদের হীন মনে করোনা, তাহলেই তোমরা সমস্ত-কিছু জয় করতে পারবে।

১৪৭