পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 লিউদ্‌মিলা জানালার কাছে গিয়ে শূন্যের দিকে চেয়ে বললো, আর কাকে ডাকছে৷, মা!

 মা নুয়ে পড়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।

—সাত—

 তারপর ইয়েগরকে বালিশের ওপর শুইয়ে দিয়ে, তার হাত দু’খানা ভেঙে বুকের ওপর রেখে মা লিউদ্‌মিলার কাছে এসে তার ঘন চুলে হাত বুলোতে লাগলেন। লিউদ্‌মিলা কম্পিতকণ্ঠে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো···অনেকদিন ধরে জানতুম ওকে। একসঙ্গে নির্বাসনে ছিলুম, এক সঙ্গে হেঁটেছি ··একসঙ্গে কারাবাস করেছি। মাঝে মাঝে বিপদ এসেছে, দুঃখ এসেছে, বহু লোক হতাশ হয়ে পড়েছে কিন্তু ইয়েগরের আনন্দের কম্‌তি ছিল না কখনো। হাসি-কৌতুকের প্রলেপ দিয়ে সে বেদনাকে ঢাকতো— দুর্বলকে বল দিতো। সাইবেরিয়ায়··· অলস জীবন যেখানে মানুষকে করে তোলে নিজের ওপর বিতৃষ্ণ,···সেখানেও সে ছিল দুঃখ-জয়ী···যদি জানতে কতবড় সঙ্গী ছিল সে! নির্যাতন অনেক সয়েছে, কিন্তু কেউ কখনো অভিযোগ করতে শোনেনি তাকে। আমি তার কাছে বহুঋণে ঋণী—তার মনের কাছে ঋণী···তার অন্তরের কাছে ঋণী। বন্ধু··· সঙ্গী···প্রিয় আমার!··· বিদায়··· বিদায়···তোমার চিহ্নিত পথে চলবো আমি···সন্দেহে না টলে···সমস্ত জীবন···বিদায় বন্ধু, বিদায়!

 লিউদ্‌মিলা মৃতের পায় মাথা লুটিয়ে দিলে।

 পরদিন অন্ত্যেষ্টির আয়োজন হ’ল। আইভানোভিচ, শোফি, মা চায়ের টেবিলে বসে গম্ভীরভাবে ইয়েগরের কথা আলোচনা করছেন।

১৫৬